স্কুলছাত্র সুভাষের লাশ উদ্ধার : পরিবারের দাবি হত্যা
ডিসি-এসপি’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন; নিহতের পরিবারের দায়িত্ব নিলেন সিআইপি দিলীপ কুমার
নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা পান্না (রূপছায়া) সিনেমা হলের পাশে একটি বাড়ির মধ্যে থেকে সুভাষ কুমার সাধু খাঁ (১৪) নামের এক হিন্দু কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে ওই বাড়ির এক নারী ভাড়াটিয়া লাশটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত কিশোর শ্রী সুভাষ কুমার সাধু খাঁ (১৪) নবম শ্রেণীর ছাত্র ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ৬৩ আড়ীয়া গ্রামের গিরিশনগর বাজার এলাকার শ্রী গনেশ চন্দ্র সাধু খাঁর ছেলে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে দুর্বৃত্তরা আঘাত ও শ্বাসরোধে সুভাষ কুমার নামের এই স্কুলছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। যেহেতু হত্যা ঘটনার মোটিভ অস্পষ্ট, সেকারণে নানাদিক মাথায় নিয়ে হত্যার সঠিক কারণ বের করতে পুলিশের একটি তদন্তে মাঠে নেমেছে।
এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএমসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের দুই বন্ধুকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় সদর থানা পুলিশ। এদিকে, মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখতে এসে নিহত হওয়া সুভাষের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তার পরিবারের ভোরন পোষনের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন মহানামযজ্ঞের আয়োজক সিআইপি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের পান্না সিনেমা হল এলাকায় ৫ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান চলছে। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে নিজ গ্রাম থেকে একটি আলমসাধুযোগে চাচাতো ভাই ও বন্ধুসহ ৮ জনের সাথে মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখতে আসে কিশোর সুভাষ। কয়েক ঘন্টা অনুষ্ঠান উপভোগ করলেও রাত ২টার পর থেকে সুভাষকে আর খুঁজে পায়নি তার বন্ধুরা। অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ভোরে এদের মধ্যে ৫ জন বাড়ি ফিরে যায়। গতকাল সকাল ৭টার েিদক শহরের পান্না সিনেমা হলের পার্শ্ববর্তী প্রয়াত ডা. আলী আশরাফের বাড়ির পরিত্যক্ত একটি চৌবাচ্চার পাশে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দিলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তবে নিহতের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে পরিবারের সদস্যরা দাবি করে সুভাষকে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস ও পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানসহ (পিপিএম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত সুভাষের এক বন্ধু জানায়, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে নিজ গ্রাম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬৩ আড়ীয়া গিরিশিনগর বাজার এলাকা থেকে ৮ জন বন্ধুর সাথে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখতে আসে সুভাষ কুমার। বন্ধুরা সকলে একসাথে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করলেও একপর্যায়ে সে সকলের আড়ালে চলে যায়। পরে রাত ২টার দিক থেকে অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সকালে কয়েকজন বন্ধু বাড়ি ফিরে গেলেও ঘটনাস্থলের আশেপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকে তার কয়েকজন বন্ধু। পরে লোকমুখে জানতে পারে পাশেই একটি কিশোরের লাশ পাওয়া গেছে। এসে দেখেন তাদের বন্ধু সুভাষ কুমার সাধু খাঁর লাশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। তবে নিহতের শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার অ-কোষে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানান চিকিৎসক। নাক দিয়ে রক্তক্ষরন হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, সকালে নিহতের মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে অপরপ্রান্ত থেকে দর্শনার কথা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তারপর থেকে নাম্বারটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ ঘটনার রহস্য তাৎক্ষনিকভাবে উদঘাটন না করতে পারলেও সঠিক ঘটনা উৎঘাটনে কাজ করছে পুলিশের একটি টীম বলে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান (পিপিএম) বলেন, চুয়াডাঙ্গা পান্না সিনেমা হলের পাশে সকালে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুভাষকে হত্যা করা হয়েছে। তবে সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা সনাক্ত করে তদন্ত করছি। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করাসহ হত্যার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পুলিশি কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ কোন মামলা করেনি। আগামীকাল (আজ) মামলা হতে পারে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা যান পাগল প্রায়। দুই ভাইবোনের মধ্যে সুভাষ বড়। সে নিজ গ্রামের স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। নিহতের মা বলেন, আমার ছেলে রাতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরলো না। আমার ছেলের সাথে কারোর কোন শত্রুতা নাই। আমার ছেলেকে কেন মেরে ফেললো? আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
এদিকে, নিহত সুভাষের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গড়াইটুপি গোষ্টবিহার শ্বশ্মানঘাটে মৃত সুভাষের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান (পিপিএম) ও তারা দেবী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ডায়মন্ড ওয়াল্ডের পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ও প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির আশ্বাস প্রদান করেন।
এদিকে, মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানে এসে নিহত হওয়া সুভাষ চন্দ্র সাধু খাঁ’র মৃত্যুর খবর সংবাদ শুনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন তারা দেবী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, ডায়ামন্ড ওয়াল্ডের পরিচালক, এফবিসিসিআই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক সিআইপি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এসময় তিনি নিহত সুভাষের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং সুভাষের পরিবারের ভোরন পোষণের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন।