নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের বুজরুকগড়গড়ী মাদ্রাসাপাড়ায় পপি খাতুন নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শ্বশুর-শাশুড়ীসহ স্বামী শাকিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে আটক করা হয়েছে পপির প্রেমিক সোহেল রানাকে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পপিকে নিজ ঘরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ নিহত পপির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই নিহতের মরদেহ দাফন করে তাঁর পরিবার। এ ঘটনায় পপির পিতা বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। পপি খাতুন (২০) চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া রাজাপুর নতুন পাড়া এলাকার হামিদুল হকের মেয়ে ও চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের বুজরুক গড়গড়ি মাদ্রাসা পাড়ার রং মিস্ত্রি শাকিলের স্ত্রী। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন পপির স্বামী শাকিল আহম্মেদ (২৫), শ্বশুর আব্দুল কাদের পিরু (৪৫), শাশুড়ি শিরিনা খাতুন (৪০) ও আসমানখালির সোহেল রানা। পুলিশ ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় পপি খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সদর থানার পুলিশ। পুলিশ সেখান থেকে পপি খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। একই সঙ্গে নিহত পপির শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে পপির স্বামী শাকিলসহ প্রেমিক আসমানখালি এলাকার সোহেলকেও আটক করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে অসুস্থতার জন্য পপির মাকে চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ মাকে দেখাশোনার জন্য পপিও সঙ্গে ছিলেন। ওই সময় থেকে আসমানখালীর সোহেল রানা নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়ে পড়েন পপি। গত বৃহস্পতিবার পপি তাঁর স্বামীর বাড়ি ফিরে আসেন। পরদিন গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত পপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পপি খাতুনের পিতা হামিদুল হক অভিযোগ করে বলেন, ১৪ মাস আগে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি মুন্সিপাড়ার পিরু ড্রাইভারের ছেলে শাকিল আহম্মেদের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর ছোট মেয়ে পপি খাতুনের। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবিতে শাকিল ও তাঁর পরিবারের লোকজন তাঁর মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। একপর্যায়ে গতকাল মৃত্যুর খবর পেয়ে পপির পিতা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যান এবং পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ পপি খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করেন। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘আমাদের ধারনা, শাকিল আমার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। হত্যার ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা পপিকে ফ্যানের সঙ্গে টাঙিয়ে রাখে।’ এ ঘটনায় আটক আসমানখালি এলাকার সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ না করলেও নিহত পপির পিতা হামিদুল হক বাদি হয়ে পপি খাতুনের স্বামী শাকিল আহম্মেদ, তাঁর বাবা আব্দুল কাদের ওরফে পিরু ড্রাইভার, শাকিলের মা শিরিনা খাতুনসহ দাদি শ্বাশুড়িকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন। আটক হওয়ার পূর্বে পপির স্বামী শাকিল আহম্মেদ এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ আমি পপিকে কোনো শারীরিকভাবে নির্যাতন করিনি। সোহেল রানা নামের একজনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে আমি শুনেছি। এ কারণে পপি নিজেই আত্মহত্যা করেছে।’ কথিত প্রেমিক সোহেল রানা জানান, ‘এ মাসের (মার্চ) ৩ তারিখ রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পপির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি পপিকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়। আমাদের পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।’ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা সেখান থেকে পপি নামের একজনের লাশ উদ্ধার করি এবং ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করি।’ তিনি আরও বলেন, লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। এ ঘটনায় পপির স্বামী এবং তাঁর শ্বশুর-শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে আটক করা হয়েছে আসমানখালির সোহলকে। তবে পপির পিতার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায়, তাঁর বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকালই ময়নাতদন্ত শেষে পপি খাতুনের লাশ তাঁর বাবার বাড়িতে নেওয়া হয় এবং মাগরিবের নরামাজের পর রাজাপুর গ্রামের কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।