শিক্ষকের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে অভিভাবক মহল : সুষ্ঠ তদন্ত দাবি!
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উত্থাপন হলেই তদন্তের পূর্বে যেমন দোষী বলা যায় না, তেমনই একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ অমূলক ভাবারও কোনো কারণ নেই। কেননা, শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত অনেকেরই যে নৈতিকতার স্খলন ঘটে বা ঘটেছে তা নানাভাবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম একটি ভালো সরকারি স্কুল। অর্জন করেছে একাধিকবার জেলার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেতাব। এই বিদ্যালয়ে পড়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের মেধাবী মেয়েরা। তাই এই বিদ্যালয়ের ভিতরে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনাকে শত চেষ্টা শত্বেও বোধহয় চেপে রাখা যাবে না। হয়ত সেই ধারাবাহিকতাই বিদ্যালয়ের ক্লাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকেও চেপে রাখা যাচ্ছে না। ছোট ছোট ভাষায় ইতিমধ্যে টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহিদ বিশ্বাসের কান্ড। ফেসবুকে ফরওয়ার্ড করা একটি ম্যাসেজ ছড়াছড়ি হচ্ছে বিভিন্ন আইডি থেকে। তবে ম্যাসেজটির মত অনেক কথাই আসছে ফেসবুকের পাতায়। ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা ম্যাসেজটি হুবহু না দিলে বোঝা যাবে না।
ম্যাসেজটি ছিলো- “আজ চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যার নাম জাহিদ স্যার, তিনি আমাদের স্কুলের ক্লাস ১০ এর একজন বড় আপুকে জড়াই ধরেছিল, তার বান্ধবিরা এর সাক্ষী আছে। মেয়েটা একটু চাপা প্রকৃতির হওয়ায় সে বিচার চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ কোনো বিচার দেয়নি। মেয়েটা অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যায়। স্যাররা সব জেনেও সব ধামা চাপা দিচ্ছে, কিন্তু এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। আমরা এর প্রতিবাদ চাই। কারো যদি এর ক্ষমতা নাও থাকে তাহলে এই ম্যাসেজটা ফরওয়ার্ড করার ক্ষমতা সবার আছে বলে আশা করি। আজ এই মেয়েকে ধরেছে কাল অন্য মেয়েকে যে ধরবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?” এই ম্যাসেজটির লেখক আইডিটি শেষ পর্যন্ত ডিএ্যাকটিভ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি এবং শহরে নানা মুখে আলোচনা হওয়া কথাগুলোর ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মালাকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- গত মঙ্গল বারে দুইজন অভিভাবক এসে কথা বলতে বলতে বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে বলেছিলেন, যদিও তাদেরকে আমি লিখিত দেওয়ার কথা বলি তবে তারা লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। তা সত্বেও যেহেতু আমি বিদ্যালয়ের অভিভাবকের দায়িত্বে আছি তাই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী, সহকারি শিক্ষিকা জেসমিন আরা ও সহকারি শিক্ষক মুজিবুর রহমানকে বিষয়টিকে ক্ষতিয়ে দেখার জন্য বলি। সহকারি শিক্ষক জাহিদ বিশ্বাসের ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনায় বদলির আদেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল খুলনার উপ-পরিচালক। ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্ত এবং বিচারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন সঠিক বিচার হবে। বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ চুয়াডাঙ্গায় নেই। উনি আসলে বিষয়টি তদন্তের সাপেক্ষে বিচার করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন- আমি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ঢাকাতে আছি। এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে আমি শুনিনি। তবে বিষয়টি আমি দেখবো।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে সহকারি শিক্ষক জাহিদ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি ঘটনাটিকে অস্বীকার করেছেন। তবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সহকারি শিক্ষক জাহিদ বিশ্বাস বর্তমানে তিনদিনের ছুটিতে আছেন। তাছাড়া, ছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তারা ঘটনাটার কথা এতটা বলেনি। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি) জাহিদ বিশ্বাসকে খুলনা সরকারি খানজাহান আলী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে গত ১৭ জুলাই আদেশ জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল খুলনার উপ-পরিচালক নিভা রানী পাঠক। বদলি চিঠি অনুযায়ী গত ২২ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে অবমুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী বলেন- ওই শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে নানা অজুহাতে ছাত্রীদের গায়ে হাত দেন। কুইঙ্গিত করেন এবং কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন। তিনি কারণে-অকারণে ছাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
সমাজে শিক্ষকরাই আদর্শ। শিক্ষকের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভেঙে পড়বে। শিক্ষকদের অবশ্যই আস্থাভাজন অভিভাবক হিসেবেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়া দরকার। সমাজের শিক্ষানুরাগী মহলের বিশ্বাস, অধিকাংশ শিক্ষকই শিক্ষাদানে আন্তরিক। গুটি কয়েক শিক্ষকের কারণে শিক্ষক সমাজের গৌরবে কালি পড়ছে, তেমনই অভিভাবকদের মধ্যেও রোপিত হচ্ছে আস্থাহীনতার বীজ।