নিউজ ডেস্ক:
গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা তদন্তে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল্লাহকে সহযোগিতা না করায় গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আশরাফুল ইসলামকে দ্রুত প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই দিন গোবিন্দগঞ্জের চামগাড়ী বিলে দায়িত্বরত সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
অবিলম্বে এই নির্দেশ কার্যকর করে চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, আইজিপিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত বলেন, ‘চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল্লাহকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ সুপার তাকে সহযোগিতা না করে প্রকারান্তরে হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।’
আদালত আরো বলেন, ‘কয়েকজন পুলিশ সদস্যের জন্য পুরো বাহিনী দায়ী হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।’
এই মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৯ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িত মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে ৬৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দাখিল করেন গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল্লাহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোর জন্য স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এবং ওই ঘটনার সময় দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য দায়ী। এই আগুন লাগানোর ঘটনায় দুজন পুলিশ সদস্য ও একজন ডিবি সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রদর্শিত ভিডিও ক্লিপ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, কিছু পুলিশ সদস্য এবং দুজন সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। আরো কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যারা আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেননি। তবে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেননি।
চামগাড়ী বিল ও কুয়ামারা নামক স্থানে সাঁওতালদের ঘরে আগুন লাগানো হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় আগুন লাগানো হয় সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার পরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এবং হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি দেখে বসতি স্থাপনকারীগণ আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আগুন লাগানোর আগেই ৫০০-৬০০ গজ দূরে মাদরপুর ও জয়পুর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন মর্মে সাক্ষীদের বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়েছে। ফলে এরূপ প্রেক্ষাপটে সাক্ষীগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত স্থানীয় অপরাধীদের সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারেননি। তা ছাড়া কোনো কোনো সাক্ষী তাদের জবানবন্দিতে আগুন লাগানোর ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলেও তাদের উপস্থিতির বিষয়টি বর্ণিত প্রেক্ষাপটে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ পোশাক পরিহিত থাকায় সাঁওতালদের স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের গুলির আওয়াজে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সাঁওতালরা তাদের স্থাপনা ছেড়ে চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দলটি খামারের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করেছিল তারাই চামগাড়ী বিলে সাঁওতালদের স্থাপনার কাছে গেছেন। পেনড্রাইভে দেওয়া ভিডিও ক্লিপসমুহ পর্যবেক্ষণ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও মসুলমান সাক্ষীদের পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, চামগাড়ী বিল নামক স্থানে নির্মিত স্থাপনা থেকে সাঁওতালরা্ চলে যাওয়ার পর আগুন লাগানো হয়েছে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র্যা ব ও ডিবির পোশাক পরিহিত সদস্য এবং সাধারণ পোশাকধারী দুজন ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ওই দলটির মধ্যে থেকে পুলিশ লেখা পোশাকধারী দুজন, ডিবি লেখা পোশাকধারী একজন ও সাধারণ পোশাকধারী দুজন (লাল ও সাদা রং এর শার্ট পরিহিত) ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে আগুন লাগাতে দেখা গেছে। অপরদিকে কুয়ামারা, সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনায় কতিপয় স্থানীয় ব্যক্তি আগুন লাগিয়েছেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে অগ্নিসংযোগে পুলিশ জড়িত কি না, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ওই নির্দেশ মোতাবেক গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।