মাসুদ রানা, মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের সাড়ে ৪ কিলোমিটার দির্ঘ মাদিয়ার বিল খননে কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। সমিতির ৪শ সদস্য নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং সমিতির সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক প্রকল্প কর্মকর্তাদের সাথে যোগ সাজোসে বিল না কেটেই টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে সমিতির সদস্যদের অভিযোগ। মাদিয়ার বিল খনন প্রকল্প কাজের সুষ্ঠ তদন্তের দাবিও করেছে সদস্যরা।
স্থানীয় প্রকল্পের সদস্যরা জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এলজিইডির অর্থায়নে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় সমিতির সদস্যদের দিয়ে খাল খনন করার নিয়ম থাকলেও এগুলো কিছুই করা হয়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার সুফল ভোগ করে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হবে। শ্রমিক কাজের বিনিময়ে অর্থ পাবে। জমির মালিকরা অনাবাদি জমি আবাদি করার সুযোগ পাবে। কিন্তু এ যেন সবই শুভঙ্করের ফাঁকি।
সরেজিমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সম্পূর্ণ কাজ না করা, ভূয়া শ্রমিকদের সর্দার দেখিয়ে বিল উত্তোলন, শ্রমিকদের অর্থ চুরিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পে শ্রমিকদের দিয়ে মাটি কাটার নিয়ম থাকলেও তা না করে এক্্রকাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি খনন করা হয়েছে। মাটি কাটাবার জন্য মোট বরাদ্দ ছিলো ১ কোটি টাকা। অথচ যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে তার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা হবে বলে বিলের সদস্যদের দাবি।
চিৎলার গ্রামের রুশিদুল ইসলাম ,দিনেশ সরকার ও আতিয়ার রহমান পানুয়েল সরকাকে লেবার সর্দার দেখিয়ে টাকা উত্তালন করা হয়েছে। কিন্তু এদের সকলের অভিযোগ তারা কেউই লেবার সর্দার না, কেউ চেকে কোন স্বাক্ষর করেনি আবার কোন টাকাও উত্তোলন করেনি। তারা আরো জানান সব টাকা সাবেক ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
শ্রমিক সর্দার রুশিদুল ইসলাম বলেন, আমি কখন কিভাবে সর্দার হয়েছি জানিনা। চেকের স্বাক্ষরের সাথে আমার স্বাক্ষর মিল করালেই সব জালিয়াতি বেরিয়ে আসবে।
সমিতির সহ সভাপতি আব্দুস ছাত্তার বলেন, ২৫ লক্ষ টাকার মতো কাজ করা হয় আর বাকী সব টাকা ধানখোলা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক আত্মসাৎ করেছে।
এই প্রকল্পের সাধারণ সদস্য স্বাধীন সরকার বলেন, মাদিয়ার বিল পানি ব্যবস্থপনা সমবায় সমিতি লি. এর টাকা সব হরিলুট হয়েছে।
ধানখোলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, এই সমিতির আমি সদস্য ছিলাম কোন নিয়ম না থাকায় এবং টাকা লুটপাট করে খাওয়ার কারণে ৪শ জন সদস্যের পক্ষে থেকে দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করছি।
মেহেরপুর জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সস্পাদক চিৎলা গ্রামের বাসিন্দা ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন বলেন, মাদিয়ার বিল খনন প্রকল্প পুরোটা পরিবারকরণ করেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। এ প্রকল্পের ১৯ জন লেবার সর্দারের মধ্যে ১২ জন তার রক্তের সর্ম্পকিয় আত্মীয়, একই পরিবারের ৪ জন এবং অপর পরিবারের ৩ জন সদস্য রয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আব্দুর রাজ্জাক কয়েকদিন আগে ২২ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে রেজিস্ট্রি করেছেন। এ টাকার উৎস কি। এতো টাকার মালিক তিনি কিভাবে হলেন। এ গুলোর সুষ্ঠ তদন্ত হলে সব দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।
সমিতির সভাপতি বিকাস মন্ডল জানান, আমি পুতুল সভাপতি। কেননা আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, আমার কিছু করার নেই। সমিতির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন।
ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান জানান, মাদিয়ার বিল খননের নামে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। বিল খনন নিয়ে সমিতির কয়েক জন সদস্য ছাড়া বাকী কেউ কিছুই জানেননা।
অভিযুক্ত ধানখোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাদিয়ার বিল প্রকল্পের আমি একজন সদস্য মাত্র। এ প্রকল্পের সভাপতি, সম্পাদক ও কর্মকর্তারা আছেন। যা করার তারা করেছেন। আামি এর কিছুই জানিনা। তবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন নির্বাচনে আমার চির প্রতিদ্বন্দী। এখন থেকে আগামী নির্বাচনে আমাকে পরাস্থ করতে তার ছেলে ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন আমার নামে কুচ্ছা রটাচ্ছে।
প্রকল্প দেখভাল করার দায়িতরত্ব এলজিইডির সহকারী ইঞ্জিনিয়ার নুর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খুব দুঃখজনক ঘটনা। বিল খনন করে গরীব অসহায় মানুষগুলি শ্রমের বিনিময়ে মজুরিসহ অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা পেত তা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, এ ধরণের একটি অভিযোগ শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।