রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

কুষ্টিয়ায় পানির সংকট আর তাপপ্রবাহে দিশেহারা কৃষক

একদিকে তাপপ্রবাহ অন্য দিকে পানির সংকট। চরম বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরসহ বেশ কিছু উপজেলার কৃষকরা। তাপপ্রবাহে পুড়ে যাচ্ছে মাঠের ফসল। পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে আছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

গত একমাসে তীব্র ছিল সারাদেশের তাপমাত্রা। বিশেষ করে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের দাবদাহ ছিল বেশ প্রখর। কুষ্টিয়াও এর ব্যতিক্রম ছিল না। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি। যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ধানখেত শুকিয়ে যাচ্ছে। কিছু ধান গাছে শীষ বের হলেও চিটা হয়ে যাচ্ছে। ভুট্টাখেত শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে শতাধিক বিঘা জমিতে শাকসবজিসহ সব অন্যান্য ফসল নেতিয়ে পড়েছে। এসব ফসলে পানি দিতে না পেরে কৃষকদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছে। টাকা দিয়েও পানি মিলছে না বলে জানালেন কৃষকরা। টাকা খরচ করে ফসল ফলিয়ে তা ঘরে তুলতে পারছেন না। এমন সংকটের আগে কখনো পড়েননি বলেও জানান তাঁরা।

মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ধান আবাদ করেছি। আমাদের মাঠের পাশ দিয়ে গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) ক্যানেল থাকলেও সেখানে কোনো পানি নেই। জমি থেকে একটু দুরত্বে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন ছিল। সেখান থেকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে পানি নিতাম। কিন্ত কিছুদিন হলো স্তর নেমে যাওয়ায় সেখান থেকেও পানি উঠছে না। পানির অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েক দিন গেলে সব শুকিয়ে যাবে।’

একই এলাকার কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলাম। জমি চাষাবাদ ও সেচে অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে। শেষের দিকে এসে তাপপ্রবাহে ভুট্টার গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছিলো তাই ওভাবেই ভুট্টা ক্ষেত থেকে তুলে এনেছি।’

মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সামাদ বলেন, ‘আগে মানুষ খাওয়ার চিন্তা করত। এখন এলাকার মানুষের বড় চিন্তা হয়ে উঠেছে খাওয়ার পানি। পানির অভাবে এলাকাবাসী গরু-ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’

এদিকে পদ্মার শাখা নদীয় কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের কোনো নলকূপে পানি উঠছে না বলে জানান মিরপুর উপজেলার তালবাড়ীয়া গ্রামের শান্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘বাড়ির টিউবওয়েলে ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েছি। এরপরও পানি উঠছে না। বিদ্যুৎচালিত মোটর বসানো আছে, সেখানেও পানি উঠছে না। সংকট ভয়াবহ। তীব্র খরায় বোরো খেতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।’

কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম মো. তৈমুর বলেন, ‘জিকে সেচ প্রকল্পে বন্ধ এবং আবহাওয়া এখন চরম উত্তপ্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে খরা চলছে। শুধু পৌর এলাকায় নয়, গ্রামাঞ্চলেও পানির সংকট চলছে। প্রতি বছরই এ সময় পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে প্রতি বছর দু-এক সপ্তারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গেলেও এবার সময়টা বেশি লাগছে।’

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে তিনটি পাম্পটি বন্ধ রয়েছে। পাম্পগুলো সচল করার চেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ সেচ কার্যক্রম চালু করা যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদ ব্যাহত হয়েছে। সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না গেলে আউশ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। তবে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলও পানির অভাবে ভালো ফলন হয়নি ‘

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহ এবং পানি সংকটের কারণে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে এ সমস্যা থাকবে না। দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলেই সংকট কেটে যাবে। জিকে সেচ প্রকল্প চালু করতেও কাজ চলছে।’

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular