একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা চলছে বিএনপিতে।

0
31

নিউজ ডেস্ক:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা চলছে বিএনপিতে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে করণীয় নিয়েও নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে ধানের শীষ প্রতীকে সাত বিজয়ী শপথ নেবে কি-না। তবে বিএনপি শপথের বিপক্ষে থাকলেও ঐক্যফ্রন্টের কেউ কেউ চান, সাত সদস্যই সংসদে গিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলুক।

আলোচনার টেবিলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও কারাগারে থাকার ইস্যুও রয়েছে। ২৯৯ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থীদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে। তাদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেবে বিএনপির হাইকমান্ড।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ তথ্য নিশ্চিত করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির আইনজীবী নেতারা বলেছেন, মামলায় জর্জরিত থাকা নেতা-কর্মীদের জামিন নেওয়াই এখন সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সংসদীয় ৩০০ আসনে যারা মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেছেন, তাদের মুক্তিও জরুরি। দুই  সিনিয়র নেতার টেলি আলাপেও সবার জামিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের বিশাল জয়ের পর ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার আলোচনাও চলছে।

অবশ্য এ ব্যাপারে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নেবে দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আমাদের প্রথম কাজ এখন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের জামিন ও কারামুক্তি। এরপর দল গোছানো এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয়ে নজর দিতে হবে। তবে সবকিছুই হবে বাস্তবতার নিরিখে।

জানা যায়, সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ধানের শীষের বিজয়ী প্রার্থীরা কেউ শপথ নেবেন না। এর কারণ হিসেবে নেতারা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, যেহেতু ভোটই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, সেখানে সংসদে গিয়ে কী লাভ হবে। এতে সরকারকে বৈধতা দেওয়া হবে। তাছাড়া এই গুটিকয়েক সংসদ সদস্যকে এলাকায় কাজও করতে দেবে না সরকার।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনেও শপথ না নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। এরপর মির্জা ফখরুল যোগ দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে। তবে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এ ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বলেন, বিজয়ীরা ঢাকায় আসুক, তাদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রমতে, গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেউ কেউ চান, সাত বিজয়ী সংসদে যোগদান করুক। তারা শপথ নিক। কারণ, সংসদে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা যাবে। সংসদের ভিতরে বাইরে সরব থাকার পক্ষে তারা।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সোমবার রাতে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কল্পিত নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এ নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবেন ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা যায়, কর্মসূচিতে বাধা দিলে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর আগে গুলশানে দলের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে ধানের শীষের প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতার নিরিখে বিএনপিকে সামনে পথ চলতে হবে। ভোটে কী হয়েছে তা নিয়ে বিশ্লেষণের কিছু নেই। সবারই বিষয়টি জানা। আমরা এ নির্বাচন ও ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ নেওয়ারও কোনো যুক্তি নেই।

তবে বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপিকে এখন রাজনীতিটাই করতে হবে। তাদের রাস্তায় নামতে হবে। ভোটের অনিয়ম, সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসনে চিত্র তুলে ধরতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যেহেতু ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা সংসদে না যাওয়ারই পক্ষে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ধানের শীষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংসদে যাওয়া উচিত। সেখানেও তারা অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পারে।’

প্রার্থীদের কাছ থেকে অনিয়মের চিত্র শুনবে বিএনপি : নির্বাচনে অংশ নেওয়া ধানের শীষের প্রার্থীদের মুখ থেকে ভোটের অনিয়মের কথা শোনার জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ অনুষ্ঠানের দিন বিএনপি তাদের প্রার্থীদেরও ঢাকায় আসতে বলেছে। ২৯৯ আসনে যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের নিয়ে ইসিতে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেওয়ার পর বিএনপি মহাসচিবের এই নির্দেশনা গেল। এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাত্র সাতজন বিজয়ী হন, বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জেতে ২৮৮ আসনে। ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের হারানো হয়েছে দাবি করে এই ভোট বাতিলের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তুললেও সিইসি কে এম নূরুল হুদা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গুলশানে দলীয়  চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রার্থীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ভোটে অনিয়ম-কারচুপির প্রমাণ, প্রতিটি কেন্দ্রের ‘অস্বাভাবিক’ ভোটের হিসাব, গ্রেফতার, এজেন্ট ও  নেতা-কর্মীদের তালিকা, সহিংসতায় আহত ও নিহতদের তালিকাসহ ৮টি বিষয়ে তথ্যসহ একটি প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়েছে। ভোট কারচুপির ভিডিও থাকলে তাও প্রতিবেদনের সঙ্গে দিতে বলা হয়েছে।