নিউজ ডেস্ক:
১৯ এপ্রিল ২০১৭। প্রথমবারের মতো ওইদিন দুই ভাগে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটির আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়।
দলের প্রধান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল, এক মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার। এরপর গত হয়েছে ছয় মাস। যেই কমিটি সেই কমিটিই রয়ে গেছে। ওয়ার্ড, থানা দূরের কথা মহানগরই ধরতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। অনেকটা পূর্বসূরিদের পথেই হাঁটছে তারুণ্যনির্ভর ঢাকা মহানগরের বর্তমান কমিটি। কার্যত, এক যুগ ধরেই ঢাকা মহানগরে নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অনেকবার উদ্যোগও নেওয়া হয়। তীরে এসে তরী ডুবার মতো শেষ বেলায় আর পারেনি বিএনপি। অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবেই হবে। খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। যে কোনো সময় কমিটি দেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগরের প্রভাবশালী নেতা ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার আহ্বায়ক কমিটি ব্যর্থ হওয়ার পর নেতৃত্বে আনা হয় আরেক সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসকে। আন্দোলন-সংগ্রামে ওই কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে দুই ভাগে ভাগ করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণে সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ ৭০ সদস্য এবং উত্তরের সভাপতি আবদুল কাইয়ুম ও সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানসহ ৬৬ জনের নাম ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে কাজ করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। সারা দেশের জেলা কমিটির পুনর্গঠনেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মহানগরের দুই শাখার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়াও তৈরি করেছেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে দুই ঢাকায় যুক্ত করা হচ্ছে। এখন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখানো হবে। এরপর তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেই ছেড়ে দেওয়া হবে দুই শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
এ প্রসঙ্গে মো. শাহজাহান গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে খসড়া কমিটি করা হয়েছে। ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) দেখিয়ে যে কোনো দিন ঢাকা মহানগরের দুই শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সূত্র জানায়, ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশের বাইরে থাকায় তা দেখাতে পারেনি। সেখানে দলের প্রধান বা শীর্ষ নেতৃত্ব কোনো সংযোজন বা সংশোধন করলে তা যুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এরপরই থানা ও ওয়ার্ড শাখার কমিটি গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে মহানগর দক্ষিণ শাখার সদস্য সচিব আবুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘কমিটির খসড়া জমা দেওয়া হয়েছে। যারা ত্যাগী ও যোগ্য তাদেরকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। আমরা ব্যর্থতার কাতারে নাম লেখাতে চাই না। ’ একই অবস্থা ঢাকা মহানগর উত্তরেও। উত্তর শাখার আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম মামলায় জর্জরিত হয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এ কারণে কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তা নিশ্চিত নয়। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দেশের বাইরে থেকেও দল পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপির উত্তর শাখার বিভিন্ন কর্মসূচিতে এম এ কাইয়ুম সমর্থকরাই বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই কমিটির খসড়া তালিকা সংশ্লিষ্ট নেতার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে এম এ কাইয়ুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কমিটি নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা কাজ করছেন। ম্যাডাম দেশে ফিরেছেন। যে কোনো সময় উত্তর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
জানা যায়, মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর কমিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও কাজ করেছে। সেখানে একটি খসড়া তালিকাও করা হয়। বর্তমান দুই শাখার কমিটিও ওই তালিকা ধরেই থানা ও ওয়ার্ড নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মির্জা আব্বাস নেতৃত্বাধীন কমিটি তালিকা প্রকাশের মুহূর্তেই আন্দোলনের ডাক আসে। শেষ পর্যন্ত থানা ও ওয়ার্ড কমিটি আর ঘোষণা হয়নি। তাই বর্তমান নেতৃত্বের তৃণমূল কমিটি করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান জানান, ‘যখন মহানগরে খোকা-সালাম কমিটি ছিল, সে সময় কিছু থানা-ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এক যুগ আগের কথা। যদিও পরে তা স্থগিত করা হয়। এরপর আর কমিটি গঠন হয়নি। ইতিমধ্যে কমিটি নিয়ে দলাদলি কমিয়ে এনেছি। মহানগর কমিটির পাশাপাশি ওয়ার্ড ও থানা কমিটিও হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ’
( বিডি-প্রতিদিন )