উগ্রতা ডেকে আনে বিপর্যয়

0
5
এক পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম ইসলাম। ইসলাম শান্তি, স্বস্তি ও মানবতার কল্যাণ সুনিশ্চিত করার অনন্য আদর্শ। উগ্রতা, মারামারি, কাটাকাটি, সন্ত্রাস, রাহাজানি কিংবা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না। অহমিকা, ক্রোধ, হিংসা, কলহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয় ইসলাম। ইসলামের সাথে উগ্রতার কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম সীমা লঙ্ঘনকারীদের কখনোই সমর্থন করে না।

অথচ আমাদের সমাজে উগ্রতা আজ মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছ। হাটে-মাঠে-ঘাটে যেখানেই যাই সব জায়গায় আজ উগ্রতা আর উচ্ছৃঙ্খলতার ছড়াছড়ি। মাহফিলের নামে উগ্রতা, রাজনীতির নামে উগ্রতা, রাষ্ট্র পরিচালনার নামে উগ্রতা, বিরোধিতার নামে উগ্রতা, প্রতিদ্বন্ধিতার নামে উগ্রতা, প্রতিশোধের নামে উগ্রতা, মতাদর্শ প্রচারের নামে উগ্রতা— এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উগ্রতার বিষবৃক্ষ মাথা চাড়া দিয়ে দাড়িয়ে নেই। কিন্তু কেন এ ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা? কেন এ আত্মঘাতী পদক্ষেপ? এ জাতি কি জীবনভর এমন চক্রেই আবদ্ধ থাকবে? কী ধর্মীয়, কী জাগতিক—সব বিষয়ে আমরা যেন অসহিষ্ণু এক জাতিতে পরিণত হয়েছি। অথচ আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে উগ্রতা নয়, নম্রতা গ্রহণ করার আদেশ করে বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বিতর্ক এড়িয়ে বলে ‘সালাম’।’(সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৩)

রমহানের বান্দাদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে এখানে আল্লাহ ‘হাওনানা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। অভিধানে এর অর্থ স্থির, গাম্ভীর্য, বিনয় ইত্যাদি উল্লেখ করা আছে। রহমানের বান্দারা যখন রাস্তায় চলে তখন তারা গর্বভরে চলে না। অহংকারীর মত জমিনে পা ফেলে না।  অহংকারীর মত বুক ফুলিয়ে চলে না। তারা আত্মগর্বে বিভোর, স্বৈরাচারী ও বিপযয়কারীর মতো নিজের চলার মাধ্যমে শক্তি দেখানোর চেষ্টা করে না। বরং তাদের চালচলন হয় ভদ্র, মার্জিত ও সত্স্বভাব সম্পন্ন ব্যক্তির মতো।

নম্রতার তাত্পর্য বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর অনুগ্রহগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কোমলতা ও নম্রতা। কেননা আর দ্বিন প্রচারের জন্য নম্রতাই বেশি প্রয়োজন। রাসুল (সা.) যদি কোমল না হয়ে কঠিন হূদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে মানুষ হজরতের কাছে না এসে আরো দূরে সরে যেতো। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত এই যে আপনি তাদের প্রতি নম্রতা দেখাচ্ছেন। যদি আপনি কঠোর স্বভাবের হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়তো। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ করুন। অতঃপর যখন সংকল্প করবেন, তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

রুক্ষ ও কর্কশ ভাষা এবং উগ্র আচরণ সবসময় ঘৃণিত। মুসলমানের অন্যতম কাজ হল তারা সবসময় দায়ি ইলাল্লাহ। শুধু নিজেই ইসলাম মানে না বরং অন্যদেরও ইসলামের প্রতি আহ্বান করা তার দায়িত্ব। আর আল্লাহর পথে আহবানকারীদের প্রথম গুণ হতে হবে নরম ভাষায় কথা বলা। আল্লাহ যখন মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠান তখন আল্লাহ বলেদিয়েছেন, অবশ্যই তার সঙ্গে যেন নরম ভাষায় কথা বলা হয়। আল্লাহ  বলেন, ‘তার সাথে নরম কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সুরা তহা, আয়াত : ৪৪)
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজে কোমল, তিনি কোমলতা ভালোবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোনো আচরণের প্রতি ততো অনুগ্রহ করেন না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৩)
আসুন! আমরা সর্বত্র উগ্রতা পরিহার করি।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, চরপাথালিয়া সালমান ফারসী (রা.) মাদরাসা, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ।