আলমডাঙ্গা ভালাইপুরের ভ্যানচালক আলমগীর হত্যার রহস্য উন্মোচন-আসামি গ্রেফতার

0
3

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভালাইপুরের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেন আলম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি জিনারুল হককে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গত বুধবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত জিনারুল আলমডাঙ্গা উপজেলার শিবপুর গ্রামের সবদ আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার ও মূল রহস্য উদঘাটনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় প্রেস বিফিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার ভালাইপুর পুরাতন মসজিদ পাড়ার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে আলমগীর হোসেন আলম (৪১) পেশায় ভ্যানচালক। প্রতিদিনের ন্যায় গত ২ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৯টায় ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যান নিয়ে ভাড়া মারার উদ্দেশ্যে বের হয়। রাতে বাড়ি ফেরার সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও বাড়িতে না ফিরলে তার পরিবারের সদস্যরা আলমগীরের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

খোঁজাখুজির একপর্যায়ে তার পরিবারের লোকজন গত ৪ অক্টোবর সকাল ৮টায় আলমডাঙ্গা উপজেলার আইন্দিপুর গ্রামের ছাতিয়ানতলা মাঠ সংলগ্ন ভাইমারা খালে কচুরিপানার নিচে আলমগীরের মরদেহ ভাসমান অবস্থায় খোঁজ পান।

এ ঘটনায় আলমগীরের মা জহুরা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানার ৫ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে মাঠে নামে। এরই এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল গত ২০ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার বড়দল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত আলমডাঙ্গা উপজেলার আইন্দিপুর গ্রামের মৃত হাফিজুলের ছেলে ইমরান (২৪) ও মনির উদ্দীনের ছেলে মাসুমকে (২০) আটক করা হয়।

আটককৃত দুজনের স্বীকারোক্তিতে একই উপজেলার শিবপুর গ্রামের সবদ আলী ছেলে ঘটনার সাথে জড়িত মূল মাস্টার মাইন্ড জিনারুল হককে গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক জানা যায়, তারা আর্থিক সংকটে থাকার দরুণ ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক গত ২ অক্টোবর আসামিরা ভালাইপুর থেকে ৩ হাত নাইলনের রশি কেনেন। এ সময় ভালাইপুর থেকে আলমগীরের ভ্যান ভাড়া নিয়ে বড়গাংনীর উদ্দেশ্য রওনা দেয়। পথিমধ্যে রাত আনুমানিক ১১টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি মাসুম ভ্যানটি থামানোর উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তার পায়ের স্যান্ডেল ফেলে দেয়। এ সময় আলমগীর ভ্যান থামালে আসামি জিনারুল তার জামার কলার ধরে নিচে নামাতে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে ভ্যানচালক আলমগীর রাস্তার পাশে গর্তে পড়ে গিয়ে কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। ওই সময় আসামিরা আলমগীরের গলায় রশি পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। পরে তার মরদেহ রাস্তা পার করে খালের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে তারা আলমগীরের পাখিভ্যানটি ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে ৩ আসামি প্রত্যেকে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের আদালতে সোপর্দ করলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আসামি ইমরানের কাছে টাকা পেতো মূল আসামি জিনারুল। সেই টাকা ইমরানের পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। পরে সে জিনারুলকে পাখিভ্যান ছিনতাইয়ের পরামর্শ দেয়। সাথে নেয়া হয় মাসুমকে। ছিনতাই করা পাখিভ্যানের চালক আলমগীর তাদের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়। এছাড়া আলমগীরের পাখিভ্যান ও তা বিক্রির টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পাখিভ্যানটি আলমগীরের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।