৫০ বছর আগেও আমেরিকায় জুমআর নামাযে পাঁচজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যেতো না। অথচ এখন হাজার হাজার মানুষ ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে সিজদায় লুটিয়ে পরছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর) বক্তব্য, আমেরিকায় প্রায় ৭০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় তিন হাজার মসজিদ আছে।
সত্য এটাই, যেখানে ২০১০ সালে শুক্রবারে প্রতি মসজিদে গড় উপস্থিতি ছিলো ৩৫৩ জন। সেখানে ২০২০ সালে প্রতি মসজিদে গড় উপস্থিতি ৪১০ জন। কেননা, (সত্যিকার অর্থে) মসজিদসমূহ আবাদ রাখা তাদেরই কাজ, যারা আল্লাহর ওপর এবং কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান রাখে…” (সুরা তাওবা, আয়াত : ১৮)
১১৭৮ খ্রি.এ সং শাসনামলের (Song Dynasty) সারকা (Circa) নামক একজন চাইনিজ রচিত দলিল থেকে জানা যায়, ১১৭৮ খ্রি.এ চিন থেকে যাত্রা করে একদল মুসলিম নাবিক Mu-Lan-Pi বা বর্তমান আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া এলাকায় পেৌঁছে যান। এতে প্রমাণিত হয়, কলম্বাসের আগেই মুসলমানরা আমেরিকায় পা রেখেছিলেন!
অষ্টাদশ শতাব্দিতে অসংখ্য মুসলমান অপহরণ করে আমেরিকায় আনা হয় দাসবৃত্তির জন্য। তাদের অনেকেই ছিলেন সুশিক্ষিত। ১৭৩১ এ গাম্বিয়া থেকে অপহরণ করে আনা হয় আইয়ুব বিন সোলাইমানকে। কতিপয় আমেরিকান আইয়ুব বিন সোলইমানের নগ্ন ছবি অঁাকতে চাইলে তিনি ওদেরকে তার পোশাক পরা শরীর দেখে ছবি অঁাকতে বলেন। ওরা বলে আমরা তোমার শরীর না দেখে অঁাকতে পারবো না। তখন বিন সোলাইমান বলেন : সামান্য পোশাকের আড়ালের ছবিই তোমরা অঁাকতে পার না, তবে কী করে তোমরা সৃষ্টিকর্তার ছবি অঁাকো যাকে কেউ দেখেনি?
জর্জিয়ার স্যাপেলো দ্বীপে (Salelo Island) আঠার শতকের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হন আফ্রিকান বংশোদ্ভুত মুসলমান বিলালি মুহাম্মদ। তিনি আমেরিকায় ইসলামি আইন কানুন সংকলন করেন। এ গুলো Bilali Document নামে খ্যাত। বিশেষজ্ঞগণ Bilali Document-কে প্রথম ফিকহ’ বা মুসলিম আইনগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এভাবেই অসংখ্য মুসলমানের প্রচষ্টোয় আমেরিকায় তাওহিদের বার্তা উচ্চকিত হয়।
আমেরিকায় ১৭৩১ বা তারও আগেই মসজিদ ছিলো। ১৮৯৯ সালে হাসান জুমআর নেতৃত্বে গঠিত North Dakota কমিউনিটির প্রচষ্টোয় একটি মসজিদ নির্মিত হয়। এটি আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। যদিও তার আগেই লেবানন, জর্ডান, সিরিয়াসহ আরব অভিবাসীদের প্রচষ্টোয় আমেরিকায় প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়।
দ্য অ্যামেরিকান মস্ক ২০২০: গ্রোয়িং অ্যান্ড ইভোলভিং’ শীর্ষক জরিপ অনুসারে, ২০১০ সালে আমেরিকায় মসজিদের সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ১০৬টি। ২০২০ সালে এ সংখ্যা দঁাড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬৯টি।
ওয়াশিংটন ডিসি
মসজিদ মুহাম্মদ, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে নির্মিত প্রথম মসজিদ। আমেরিকাতে বসবাসরত আফ্রিকান মুসলমানরা এটি নির্মাণ করেন। প্রাথমিকভাবে ন্যাশন অব ইসলামের মসজিদ হিসেবে ব্যবহূত হলেও পরবর্তীতে মসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
নিউইয়র্ক
আমেরিকার প্রাচীনতম মসজিদের অবস্থান নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। উনবিংশ শতাব্দীতে বাল্টিক অঞ্চল থেকে আগত তাতার শ্বেতাঙ্গ মুসলমানরা দ্বিতল এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
নর্থ ডাকোটা
নর্থ ডাকোটা মসজিদটি আমেরিকার দ্বিতীয় প্রাচীনতম মসজিদ। সিরিয় ও লেবানিজ অভিবাসীরা এটি নির্মাণ করেন। চারটি সরু মিনার ও একটি গম্বুজের সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদটি ২০০৫ সালে সংস্কার করা হয়।
সিরিয়া থেকে আগত অভিবাসীরা মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি রোজ অব ফ্রেটারনিটি লজ এবং মুসলিম টেম্পল হিসেবেও পরিচিত।
মসজিদটি ঐতিহ্যগত নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত।
আসলে আমেরিকার মসজিদের তালিকা সুদীর্ঘ। যেমন অটোয়ার মসজিদ, আত-তাওহিদ মসজিদ, আন-নুর মসজিদ, আল ইসলাহ জামে মসজিদ, আল-রশিদ মসজিদ, আস-সালাম মসজিদ, দাওয়াহ মসজিদ, বায়তুর রহমান মসজিদ, বায়তুল ইসলাম মসজিদ, বায়তুল হামদ মসজিদ, মসজিদ দারুস-সালাম, মসজিদে ওমর ইবনে আল-খাত্তাব ইত্যাদি।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
কাপাসিয়া, গাজীপুর ।