নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর বনানীতে তরুণী ধর্ষণ মামলার আসামি বাহাউদ্দীন ইভান ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাহাউদ্দীন ইভানের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা দায়েরের পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাব-১ ও ১১ যৌথ অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই সুলতানা আক্তার।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাহাউদ্দীন ইভানের স্ত্রী। সেখানে এই প্রতিবেদকের কাছে উক্ত অভিযোগ করেন তিনি।
ইভানের স্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের সাড়ে চার বছরের একটা ছেলে আর আড়াই বছরের একটা মেয়ে আছে। ঘটনার দিন আমি তাদেরকে নিয়ে আমার বাবার বাসা লালবাগে ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টায় আমি বাসায় ফিরে আসি। তখন তো আমি তাকে (অভিযোগকারী তরুণী) বাসায় দেখিনি।
ইভানের মা নাসবিন জাহান বলেন, ওই দিন রাত ১২টায় ইভানকে গোসল করার জন্য একটি গোলাপী রঙের তোয়ালে দিয়ে আসি। আর তখন তো তিনজন কাজের মেয়ে আর আমার ছোট ভাই বাসায় ছিল। তখন তো আমরা কাউকে বাসায় দেখিনি। পরেরদিন সকাল ৭টায় ওই মেয়ে পুলিশ নিয়ে বাসায় যায়। ইভানকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
সকালে ইভান কোথায় ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন ওর বাবা নামাজ পড়ে হাঁটতে যায়। ইভানও হাঁটতে গিয়েছিল। ইভানের বাবা বোরহান উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। পকেটে টাকা নেই। আমার হার্ডওয়্যারের ছোট একটি দোকান আছে। আমি যে বাড়িতে থাকি, সেটা আমার না, বাড়িটা আমার স্ত্রীর।
ইভানের বাবা-মা বলেন, আমরা নিজেরাই তাকে (ইভান) ধরিয়ে দিয়েছি। আমাদের ছেলে নির্দোষ হলে খালাস পাবে, আর দোষী হলে সাজা হবে। তবে আমরা সঠিক বিচার চাই।
এদিকে ৫ জুলাই ওই তরুণী বাহাউদ্দীন ইভানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ইভানের সাথে তার ১১ মাস আগে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। এ বন্ধুত্বের সূত্র ধরে চার মাস আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। গত ৪ জুলাই রাত ৯টায় ইভান তাকে ফোন করে জানায়, আজ তার জন্মদিন। ইভান তার জন্মদিনে ওই তরুণীকে বাসায় আসতে বলে। তরুণীকে মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং তাদের সম্পর্কের কথা মাকে বলবে বলে জানায় ইভান। টেলিফোনে তার মায়ের পরিচয়ে এক মহিলার সঙ্গে তরুণী ও তার বোনের কথা হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় বাদী ইভানের বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে তার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে ইভান বলে, তার মা অসুস্থ, জোরে কথা বলা যাবে না। সকালে পরিচয় করে দেওয়ার কথা বলে ইভান। বাদী বাসায় জন্মদিনের আয়োজনের কোনো লক্ষণ দেখতে পায়নি। বাদী নিজের বাসায় ফিরে যেতে চাইলে ইভান তাকে বাসায় যেতে দেয় না। ইভান তাকে রাতের খাবার খাওয়ায় এবং বারণ সত্বেও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। এরপর রাত দেড়টার দিকে ইভান তরুণীকে ধর্ষণ করে। বাদী চিৎকার করতে থাকলে তাকে রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাসা থেকে বের করে দেয় ইভান। ব্যাগের মধ্যে তিনটা ড্রেস, দুটা জিন্স, একটা কুর্তা, তিনটি মোবাইল, চার্জার, সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড, ১৫ হাজার টাকা ছিল বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন।
ইভান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আগেও কয়েকবার ধর্ষণ করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী। মুখ খুললে তার কাছে থাকা খারাপ ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। অভিযোগ দায়েরের পরের দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ইভানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর শুক্রবার তার সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ৪ জুলাই ইভান বাদীর বাসায় গিয়ে জন্মদিনে তার মায়ের সাথে পরিচয় করে দেবে বলে জানায়। রাতে ভিকটিম ইভানের বাসায় গিয়ে তার মাকে না দেখতে পেয়ে তার বিষয়ে জানতে চায়। ইভান তখন ভিকটিমকে জানায় যে, তার মা অসুস্থ, সকালে তার সাথে দেখা করিয়ে দেবে। ভিকটিম রাতে তার বাসায় অবস্থান করে। রাত দেড়টার দিকে ইভান বাদিনীকে রাতের খাবার ও নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায় এবং ধর্ষণ করে।
রিমান্ড আবেদনে আরো বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে অনেক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাচ্ছে। আসামির হেফাজত থেকে ভিকটিমের কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য মালামাল, ভিকটিমের ছবি ও অশ্লীল ভিডিও উদ্ধার করা প্রয়োজন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভিকটিমের নগদ টাকা ও মালামালসহ অশ্লীল ছবি ও ভিডিও উদ্ধারের লক্ষ্যে এবং ভিকটিমের মেডিক্যাল পরীক্ষাকালীন সংরক্ষিত আলামতের সাথে আসামির ডিএনএসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বার্থে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজন।
রিমান্ড শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, সম্প্রতি বনানীতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের মামলা নেননি ওসি ফরমান আলী। আর এই মামলা তড়িঘড়ি করে নিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ইভানের সাথে বাদীর ১১ মাস আগে ফেসবুকে পরিচয়। আর তাদের চার মাসের প্রেম। বাদী বিবাহিত মহিলা। রাত সাড়ে ১০টার সময় তিনি আসামির বাসায় এলেন কেন?
তিনি আরো বলেন, বাদী বলেছেন, ইতিপূর্বেও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। আগে ধর্ষণ করলে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে ধর্ষণ করবেন কেন? আর ওইদিন রাতে তার স্ত্রী ১১টায় বাসায় আসেন। ওই সময় ওই তরুণী বাসায় ছিলেন না। বাদীর সাথে থাকা তিনটি ড্রেস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এ আইনজীবী।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন মাস আগে বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ দিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বনানীতে একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটল।