স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
প্রধানমন্ত্রী কতৃক অর্থ বরাদ্ধ এবং শিল্প মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা সত্বেও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অবসর ভোগীরা, তাদের ভাগ্যে গ্রাচুইটি সহ অন্যান্য পাওনাদির কানাকড়ি ও জোটেনি। ফলে অর্থাভাবে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। চিকিৎসার অভাবে ও ঋনের বোঝা নিয়ে ধুকে ধুকে মরছে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের শ্রমিক র্কমচারীদের বকেয়া বেতন ও অবসর ভোগীদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য ১০০ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণ র্পরিশোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং আখের মুল্য পরিশোধ ও বিভিন্ন উপকরন ক্রয় বাবদ ২৫০ কোটি টাকা অথাৎ সর্বমোট ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেন। তন্মধ্যে ২ দফায় ২৫০ কোটি টাকা করপোরেশন কে প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ওই টাকা অন্য খাতে সরিয়ে নেয়ায় অবসর ভোগীদের ভাগ্যে তার কানা কড়িও জোটেনি। কৃষকরা ও তাদের আখ বিক্রির মুল্য আজ ও পায়নি। এছাড়াও শিল্প মন্ত্রনালয়ের ২০১৯ সালের ২৮শে মে তারিখের এক স্বারকে চিনি শিল্পের কর্মচারী প্রবিধানমালা ১৯৮৯ এর ৫১ ধারা অনুযায়ী যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ২০১৫ সালের ১লা জুলাই থেকে পিআরএল ভোগ শেষে অবসরে গেছেন এবং জীবিত আছেন তাদের জন্য উৎসব ভাতা, মাসিক চিকিৎসা ভাতা ও বাংলা নবর্বষ ভাতা প্রদানের জন্য মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন সকল সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়েছে। সে আলোকে শিল্প মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন অন্যান্য সংস্থা নির্দেশনাটি কার্যকরি করলেও চিনি শিল্প তা আজো বাসবতবায়ন করেনি। চিনিশিল্প সংস্থা ২০১৯ সালের ১২ জুন বোর্ড সভায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাগজেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। অবসর ভোগীদের কপালে তা জোটেনি। চিনি শিল্পের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আবু তাহের ভুইয়া জানান, পি আরএল শেষ হবার পরদিনই সরকারী কর্মচারীদের পেনশনের টাকা পরিশোধ করা হয়। অথচ সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বৃদ্ধ বয়সে অবসরে গিয়ে পাওনা গ্রাচুইটি পেতে ৮/১০ বছর যাবৎ দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা তো দুরের কথা সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। অসহ ঋনের বোঝা নিয়ে হতাশা-বেদনায় মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়ছে। যা অবসর ভোগী প্রবীন কর্মচারীদের প্রতি এক নিষ্ঠুর আচরন। অথচ একসময় চিনি শিল্পের সোনালী দিন ছিল। চিনিকল গুলো লাভজনক ছিল। সরকারি কোষাগারে ভ্যাট কর খাতে কোটি কোটি টাকা জমা দিত। তখন চাষীদের আখের মুল্য পরিশোধ,উৎপাদন উপকরন সংগ্রহ, শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা এবং অবসর ভোগীদের পাওনাদী পরিশোধে সরকারের উপর নির্ভর করতে হতো না। কিন্তু অসম প্রতিয়োগিতায় পতিত হয়ে এখন আর সে অবস্থা নেই। বর্তমানে বিক্রিত আখের মুল্য না পেয়ে কৃষকরা যেমনি হতাশ, তেমনি মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা ও অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব ফেরদৈৗস ইমাম জানান, বিগত সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান সরকার প্রবীনদের জন্য অনেক কল্যানের অংগীকার করেছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আর্থিক সহায়তা দানের জন্য বাজেট ও পাশ করেছেন। যার সুবিধা শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীন অন্য সংস্থা গুলো ভোগ করলে ও চিনি শিল্পের অবসর ভোগীরা বি ত রয়েছেন। তার মতে যে দেশে পদ্মা সেতু, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেট্রোরেল, কর্নফুলি ট্যানেল, ৬ লেনের মহাসড়ক নির্মানের মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন অর্থের অভাব হয়না। সে দেশের সরকারী কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীন অসহায় কর্মচারীরা তাদের পাওনা মাত্র কয়েক’শ কোটি টাকা না পেয়ে ধুকে ধুকে মরবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা কল্যানকর রাষ্ট্রের জন্য বা সভ্য সমাজের জন্য বেমানান,অপমান ও লজ্জার। মুজিববর্ষে জাতীর জনকের জন্ম বার্ষিকীতে বর্তমান সরকারকে মানবতার মা,ন্যায়ের প্রতীক,অভিভাবক বি ত অবসরপ্রাপ্ত প্রবীনদের ভরসা বলে আখ্যায়িত করে এই অমানবিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় চিনি শিল্পের অবসরপ্রাপ্ত অসহায় প্রবীন কর্মকর্তা কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের জন্য প্রদানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।