মানুষ সাধারণত তার আত্মীয়তা, হৃদ্যতা কিংবা কোনো মানবসৃষ্ট আদর্শের টানে অপরাধীরও পক্ষ অবলম্বন করে বসে, যা অপরাধীকে আরো বেপরোয়া করে তোলে। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি সত্য সংবলিত কিতাব নাজিল করেছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে যে উপলব্ধি দিয়েছেন, সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে মীমাংসা করতে পার। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষাবলম্বনকারী হয়ো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৫)
এ আয়াতগুলো যদিও সাধারণ পথনির্দেশ সংবলিত, কিন্তু নাজিল হয়েছে বিশেষ এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। বনু উবায়রিকের বিশর নামের এক ব্যক্তি, যে বাহ্যিকভাবে মুসলিম ছিল, রিফাআ নামের এক সাহাবির ঘর থেকে কিছু খাদ্যশস্য ও হাতিয়ার চুরি করে নিয়ে যায়। আর নেওয়ার সময় সে এই চালাকি করে যে খাদ্যশস্য যে বস্তায় ছিল তার মুখ কিছুটা আলগা করে রাখে। ফলে রাস্তায় অল্প অল্প গম পড়তে থাকে।
এভাবে যখন এক ইহুদির বাড়ির দরজায় পৌঁছে তখন সে বস্তার মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। পরে আবার চোরাই হাতিয়ারও সেই ইহুদির বাড়িতে রেখে আসে, অতঃপর যখন অনুসন্ধান করা হলো, তখন একে তো ইহুদির বাড়ি পর্যন্ত খাদ্যশস্য পড়ে থাকতে দেখা গেল। দ্বিতীয়ত, হাতিয়ারও তার বাড়িতেই পাওয়া গেল। তাই প্রথম দিকে নবী (সা.)-এর খেয়াল এ দিকেই গেল যে সেই ইহুদিই চুরি করেছে।
ইহুদিকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, হাতিয়ার তো বিশর নামের এক ব্যক্তি আমার কাছে রেখে গেছে। কিন্তু সে যেহেতু এর সপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করতে পারছিল না, তাই তাঁর ধারণা হলো সে নিজের জান বাঁচানোর জন্যই বিশরের নাম নিচ্ছে। অন্যদিকে বিশরের খান্দান বনু উবায়রিকের লোকজনও বিশরের পক্ষাবলম্বন করল এবং তারা জোর দিয়ে বলল, বিশরের নয়, বরং ওই ইহুদিরই শাস্তি হওয়া উচিত। এ পরিস্থিতিতেই এই আয়াত নাজিল হয় এবং এর মাধ্যমে বিশরের ধোঁকাবাজির মুখোশ খুলে দেওয়া হয়। আর ইহুদিকে সম্পূর্ণ নিরপরাধ সাব্যস্ত করা হয়।
এ আয়াতগুলোর দ্বারা একদিকে তো নবী (সা.)-এর সামনে ঘটনার প্রকৃত অবস্থা উন্মোচন করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমায় ফায়সালা দানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি বাতলে দেওয়া হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো যদি কারো অপরাধী হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তার পক্ষাবলম্বনের কোনো সুযোগ নেই। অপরাধী বা খিয়ানতকারী যেই হোক, তার পক্ষ অবলম্বন করা যাবে না।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘এবং যারা নিজেদের সঙ্গেই খিয়ানত করে তুমি তাদের পক্ষে বাগবিতণ্ডা করো না। আল্লাহ কোনো খিয়ানতকারী পাপিষ্ঠকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৭)
এ জন্যই নবীজি (সা.) বিচারিক কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের সামনে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দিতেন না। তাঁর মানসিকতা এমন ছিল যে যদি তাঁর কোনো নিকটাত্মীয়ও দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে তার ওপরও শরয়ি শাস্তি প্রয়োগ করতে তিনি পিছপা হবেন না।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্যের পক্ষে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।