নিউজ ডেস্ক:
বিশ্ব ক্রিকেটের চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারত ও পাকিস্তান। এই দু’দলের ম্যাচ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে থাকে ক্রিকেটপ্রেমি ভক্তরা। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটা স্বাভাবিক থাকায় গ্লোবাল কোন ইভেন্ট ছাড়া ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে ক্রিকেট বিশ্ব।তবে আগামীকাল ভারত-পাকিস্তানের মর্যাদার লড়াই দেখতে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৪তম আসরের পঞ্চম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দল দ’ুটি। জয় পেতে মুখিয়ে আছে দু’দলই। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান।
রাজনৈতিক বিরোধের কারনে সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় কোন সিরিজে অংশ নেয়নি ভারত ও পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০১২ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিলো দু’দল। ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত ঐ সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো পাকিস্তান। এর আগে ২০০৭ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছিলো ভারত ও পাকিস্তান।
তাই আইসিসির টুর্নামেন্ট ও এশিয়া কাপ ছাড়া সচরাসচর মুখোমুখি হতে দেখা যায় না ভারত ও পাকিস্তান। ফলে এই দু’দলের ম্যাচের জন্য মুখিয়ে থাকে অগণিত ক্রিকেটপ্রেমিরা। অবশেষে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। এশিয়া কাপ ক্রিকেটপ্রেমিদের অপেক্ষার ইতি টানতে যাচ্ছে।
এবারের এশিয়া কাপে একই গ্রুপে পড়ে যায় ভারত ও পাকিস্তান। এমন ম্যাচের জন্য উত্তেজনা রয়েছে খেলোয়াড়দের মাঝেও। তাইতো মর্যাদার লড়াইয়ে জয়ের জন্য মুখিয়ে রয়েছে রোহিত-ধোনি ও সরফরাজ-মালিকরা।
ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ান বলছেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বিশেষ মর্যাদার ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই টান টান উত্তেজনা। সেই উত্তেজনা আমাদের মধ্যেও কাজ করছে। দুর্দান্ত একটি ম্যাচ হবে বলে আমার ধারনা।’
হংকং-এর বিপক্ষে ম্যাচের পরদিনই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হচ্ছে ভারতকে। পরপর দু’দিন দু’টি ম্যাচ রয়েছে তাদের। এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক হয়েছে। তবে পরপর দু’দিন ম্যাচ খেলতে কোন সমস্যা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ভারতের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান আম্বাতি রাইদু। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়না পরপর দু’দিন ম্যাচ খেললে কোন সমস্যা হবে। কারন আমরা পেশাদার খেলোয়াড়। তবে এটি ঠিক পরপর দু’দিন ম্যাচ খেলা অনেক কঠিন। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে তরতাজা হয়েই মাঠে নামবে ভারত।’
হংকং-এর বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় দিয়ে এবারের এশিয়া কাপ মিশন শুরু করেছে পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজেদের ভালোভাবে ঝালিয়ে নেয়া গেছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান বাবর আজম, ‘ভালোভাবেই টুর্নামেন্ট শুরু করতে পেরেছি আমরা। এই পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে আমাদের। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এমন জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ম্যাচ দিয়ে নিজেদের ভালোভাবে ঝালিয়ে নেয়া গেছে। পরের ম্যাচের নিজেদের ভালোভাবে প্রস্তুত আমরা।’
গেল বছর দু’বার মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তান। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ১২৪ রানে জিতেছিলো ভারত। তবে ফাইনালে ভারতকে লড়াই করার সুযোগ দেয়নি পাকিস্তান। ১৮০ রানের জয়ে শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান। তাই এশিয়া কাপে পাকিস্তানের উপর বাড়তি চাপ থাকবে বলে জানান দলের লেগ স্পিনার শাহদাব খান। তিনি বলেন, ‘এ ম্যাচটি আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন সর্বশেষ মুখোমুখিতে আমরাই জয়ী হয়েছি। সেটি ছিলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। তাই এ ম্যাচ জয়ে জন্য আমাদের উপর চাপ থাকবে। কিন্তু আমরা সহজভাবেই ম্যাচটিকে নিচ্ছি। আশা করবো পুরো দলই সেরা ক্রিকেটই খেলবে।’
নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দিয়ে এশিয়া কাপে খেলতে এসেছে ভারত। তাই দলের নেতৃত্বে আছেন ওপেনার রোহিত শর্মা। তার ডেপুটি হিসেবে রয়েছেন ধাওয়ান। তবে ভারতের আসল ভরসা- সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বসে আছেন তিনি। ৩২১টি ওয়ানডের মালিক ধোনি। তাই ভারতের মিডল-অর্ডার সামলানোর পুরো দায়িত্ব তার উপর। মিডল-অর্ডার তার সঙ্গী হবেন লোকেশ রাহুল, রাইদু, দীনেশ কার্তিক ও কেদার যাদব। ভারতের বোলিং বিভাগের দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্রা চাহাল দলের প্রধান ভরসা। পেস অ্যাটা তরুণদের নিয়ে গড়া। সেখানে রয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ, শারদুল ঠাকুর ও নতুন মুখ খলিল আহমেদ।
পাকিস্তানের মূল শক্তি তাদের বোলিং। বোলাররাই হংকং-এর বিপক্ষে পাকিস্তানকে সহজ জয়ের স্বাদ দেন। পেসার উসমান খান ৩টি, হাসান আলী ও শাহদাব ২টি করে উইকেট নেন। ফলে ১১৬ রানেই গুটিয়ে যায় হংকং। ১১৭ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে ২৩ দশমিক ৪ বল খরচ করে পাকিস্তান। শুরুতে ফখর জামানের সাথে রয়েছেন ইমাম উল হক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ১১৪ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছিলেন জামান। সেটি ছিলো তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচ। অবশ্য ঐ ম্যাচের পরও নিজের সেরা ফর্ম ধরে রেখেছেন জামান। তাই ১৯ ম্যাচ শেষে তার গড় ৭২ দশমিক ৬০। যা জামানের আত্মবিশ্বাসের টনিক। বাবর আজম, মালিক, সরফরাজ, আসিফ আলি দলের মিডল-অর্ডার সামলাবেন। ভারতের বিপক্ষে ভালো ফল পেতে হলে এই মিডল-অর্র্ডারতে জ্বলে উঠতে হবে। অবশ্য তারা সকলেই পরীক্ষিত।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১২৯বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের জয়য় ৫২টি। পাকিস্তানের ৭৩টিতে জয়। ৪টি ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, আম্বাতি রাইদু, মনীষ পান্ডিয়া, কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দিনেশ কার্তিক, কুলদীপ যাদব, হার্ডিক পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্রা চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ, শারদুল ঠাকুর ও খলিল আহমেদ।
পাকিস্তান: সরফরাজ আহমেদ(অধিনায়ক), ফখর জামান, ইমাম উল হক, শান মাসুদ, বাবর আজম, শোয়েব মালিক, আসিফ আলী, হারিস সোহেল, শাদাব খান, মুহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলী, মোহাম্মদ আমির, জুনাইদ খান, উসমান সিনওয়ারি ও শাহিন আফ্রিদি।