নিউজ ডেস্ক:
শেষ টেস্ট জিতে চনমনে থাকা বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানে উড়িয়ে দিয়েছে। দুর্দান্ত ব্যাটিং, দারুণ বোলিং আর উদ্দীপ্ত ফিল্ডিং প্রদর্শন করে জয় তুলে নিয়েছে টাইগার বাহিনী। এই জয়ের মাধ্যমে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
ডাম্বুলায় টাইগার ওপেনার তামিক ইকবালের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩২৫ রানের বড় টার্গেট পায় লঙ্কানরা। জবাবে একবারের জন্যও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ব্যাটে-বলে ছিল টাইগারদের দাপট। ৩২৫ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ২৩৪ রানেই থামল স্বাগতিকরা। ৯০ রানের বড় জয় পেল মাশরাফি বাহিনী।
সফরকারী বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবাল, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও হার্ডহিটার সাব্বির রহমানের ব্যাটিং দৃঢ়তায় এ বিশাল রান সংগ্রহ করে মাশরাফি বাহিনী।
টাইগারদের ছুঁড়ে দেওয়া ৩২৫ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা উইকেট হারিয়ে ২৯ বল বাকি থাকতেই ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায়।
শেষ উইকেটসহ মুস্তাফিজ নিয়েছেন তিনটি। মাশরাফি, মেহেদি মিরাজ দুটি করে উইকেট লাভ করেছেন। তাসকিন ও সাকিব একটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন।
ফিল্ডিংয়ে নেমে বাংলাদেশের হয়ে বোলিং শুরু করেন মাশরাফি। লঙ্কানদের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন দাসুনকা গুনাথিলাকা এবং উপুল থারাঙ্গা। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ম্যাশের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন গুনাথিলাকা। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। দলীয় শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। মাশরাফি প্রথম ওভারে কোনো রান না দিয়েই উইকেট তুলে নেন।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে কুশল মেন্ডিসকে (৪) বিদায় করেন অভিষিক্ত মিরাজ। আগেই একবার মেন্ডিসকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেললেও এবার শুভাগতর তালুবন্দি করেন। দলীয় ১৫ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় লঙ্কানরা। এরপর টিকতে পারেননি ওপেনার উপুল থারাঙ্গা (১৯)। তাসকিনের করা দলীয় ১১তম ওভারের শেষ বলে মাশরাফির তালুবন্দি হয়ে ফেরেন থারাঙ্গা। দলীয় ৩১ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর জুটি গড়ে ৫৬ রান যোগ করেন আসেলা গুনারত্নে এবং চান্দিমাল। ইনিংসের ২৪তম ওভারে সাকিবের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে মোসাদ্দেকের দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন ২৪ রান করা গুনারত্নে। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর আবারো মিরাজের আঘাত। বিদায় নেন দিনেশ চান্দিমাল (৫৯)। সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। দলীয় ১২১ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। দলীয় ১৫৩ রানের মাথায় বিদায় নেন মিলিন্দা সিরিবর্ধানে। ব্যক্তিগত ২২ রান করে বিদায় নেন মোস্তাফিজের বলে তুলে মারতে গিয়ে। বদলি খেলোয়াড় শুভাগত হোমের তালুবন্দি হন তিনি। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বোলিংয়ে আসেন মাশরাফি। প্রথম বলেই তুলে নেন সাচিথ পাথিরানাকে। ৩১ রান করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যাচে বিদায় নেন তিনি। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
ইনিংসের ৪১তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন সুরাঙ্গা লাকমলকে। ব্যক্তিগত ৮ রানে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন লাকমল। পরে দলীয় ২৩৪ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
শনিবার রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে বেলা তিনটায় মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি উপল থারাঙ্গা।
ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৯ রানে ওপেনার সৌম্যের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ১০ রানে সাজঘরে ফিরেন সৌম্য। এর পর তামিমের সঙ্গে ৯০ রানের জুটি গড়েন সাব্বির হাসান। দলীয় ১১৯ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে সফরকারীদের। লঙ্কান অধিনায়ক উপল থারাঙ্গার অসাধারণ এক ক্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর ফিরে যান সাব্বির। তবে এর আগে মাত্র ৫৬ বল খেলে ৫৪ রান করেন সাব্বির। যেখানে ৪০ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। সাব্বিরের আউটের পরে আরো একটি ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ফিরে যান মাত্র এক রান করে।
মুশফিকের ফিরে গেলে সাকিবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম। দুজনে মিলে করেন ১৪৪ রানের অসাধারণ এক জুটি। তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারে ৮ম শতক। আর সাকিব দেখা পান ৩৩তম হাফ সেঞ্চুরির। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৭ রান করেন তামিম। আর সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৭২ রান।
শেষ দিকে মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেনের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২৪ রান সংগ্রহ করে টাইগার বাহিনী। এক ছক্কা ও ৩ চারে ৯ বলে অপরাজিত ২৪ রান করেন মোসাদ্দেক। আর ৭ বলে ১ ছক্কায় ১৩ রান সংগ্রহ করেন রিয়াদ।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট পান সুরাঙ্গা লাকমল। আর লাহিরু কুমারা, সাদকান ও দাস গুনারত্নে নেন একটি করে উইকেট।