শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কমিশন প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তির লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশন সুপারিশ করেছে, সংবিধানে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ব্যবহার করা হবে এবং ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দের পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহৃত হবে। তবে ইংরেজি সংস্করণে “People’s Republic of Bangladesh” অপরিবর্তিত থাকবে। পাশাপাশি, নাগরিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে ‘বাঙালি’ পরিচয়ের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশি’ ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৬৮.২৮ শতাংশ মানুষ নির্দলীয় রাষ্ট্রপতি চায়, আর ৮২.৬৫ শতাংশ রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি ভোট দিতে চায়। এছাড়া, সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে ভোট ৫০ শতাংশের কম হলে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে একটি স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালের সংবিধানেই ফ্যাসিবাদের বীজ নিহিত ছিল, যা পরবর্তীতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের দলীয়করণ ও দুর্নীতির প্রসারে ভূমিকা রেখেছে।
পাঁচ খণ্ডের এই প্রতিবেদনটির প্রথম অংশে রয়েছে সংবিধানের পর্যালোচনা, দ্বিতীয় অংশে সুপারিশ ও তৃতীয় অংশে সুপারিশের যৌক্তিকতা। দ্বিতীয় খণ্ডে ১২১টি দেশের সংবিধানের বিশ্লেষণ এবং তৃতীয় খণ্ডে রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে এবং এতে ৩২ জন গবেষক কাজ করেছেন।