বিপ্লব নাথ (চট্টগ্রাম) : ১৯৫৭ সালে সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ৬১ বছরে পদার্পন করেছে আজ বুধবারে এ উপলক্ষ্যে বর্ণিল নানা উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। নানা আনুষ্ঠানিকতা, মেডিকেল কলেজের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের আনন্দমুখর উপস্থিতিতে বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ৬১তম সিএমসি ডে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা দুইদিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী, আনন্দ উৎসব ও ঐতিহ্যবাহী মেজবানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। র্যালীতে ছাত্রছাত্রীরা নানা বর্ণের স্লোগান লেখা ব্যানার, ফেস্টুন, বোর্ড বহন করে। র্যালীতে ছিলো অশ্বারোহীদল, রাজা-রাণীসহ বিভিন্ন সাজে অংশ নেন ছাত্রছাত্রীরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত ৬১তম সিএমসি ডে’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ইসমাইল খান।
উপস্থিত ছিলেন সিএমসি ছাত্রলীগের সভাপতি তারিফুল ইসলাম রাতিন। র্যালী শেষে সারা গায়ে ব্যান্ডিজ বাঁধা অবস্থায় ছাত্রদের একটি ডান্স পারফরমেন্স ছিলো আকর্ষনী।
উৎসবের আয়োজক সিএমসি ছাত্রলীগের সভাপতি তারিফুল ইসলাম রাতিন জানান, প্রতিষ্ঠার ৬১তম বর্ষে মিলন মেলার আয়োজন করা হলেও এবারের আয়োজনটা ছোট তবে অনেক উৎসবমুখ হয়েছে।
উৎসবে যোগ দিয়েছে এই মেডিকেল কলেজের শত শত প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী। এবার মূলত শিক্ষার্থীরাই সব কিছু আয়োজন করছে। র্যালি, কেককাটার পর দুপুরে মেজবানের আয়োজন করা হচ্ছে। কলেজ শিক্ষক, ছাত্রলীগ এবং ছাত্রসংসদ যৌথভাবে ‘সিএমসি ডে’ উদযাপন করছে। এবারের আয়োজনে রেজিস্ট্রেশনের কোনো বিষয় রাখা হয়নি। তাই কোন রেজিস্ট্রেশন ফি ছিলো না।
এবার তিন হাজার লোকের জন্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানির আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর জানান, ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বর্তমানে দেশের একটি অন্যতম প্রধান চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ১ বছর মেয়াদী হাতে কলমে শিখনসহ (ইন্টার্ণশিপ) স্নাতক পর্যায়ের ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। যাতে প্রতিবছর ১৯৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
এছাড়াও এখানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমডি ও এমএস শিক্ষাক্রম চালু আছে। ১৯০১ সালে আন্দরকিল্লায় প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রাঙ্গণে ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। যাতে চার বছরমেয়াদী এলএমএফ ডিগ্রি প্রদান করা হতো। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই কলেজের উদ্বোধন করেন। ডা. আলতাফ উদ্দীন আহমেদ ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধ্যক্ষ।
১৯৬০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালই চট্টগ্রাম মেডিকেল হিসেবে সেবা প্রদান করতো। ১৯৬০ সালে এটি বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। মাত্র ২৬ জন শিক্ষক এবং ৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। তখন এর বিভাগ ছিল তিনটি। এনাটমি, ফিজিওলজি এবং প্রাণ রসায়ন।
১৯৬০ সালে এতে শুধুমাত্র মেডিসিন, সার্জারি এবং ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগ ছিল। ১৯৬৯ সালে বর্তমান ভবনের কাজ সম্পন্ন হলে ১৯৬৯ সালে এটি বর্তমানের সাততলা ভবনে স্থানান্তরিত হয়।
১৯৯০ সালে ডেন্টাল ইউনিট এবং ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি চালু হয়। বর্তমানে এর শয্যাসংখ্যা ১০১০। ২০০৭ সালে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং, কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফিক স্ক্যান, ডিএনএ টেস্টিং চালু হয়।