এদিকে জেলাব্যাপী পুলিশি অভিযানের মুখে বিএনপি ও জামায়াতের পদধারী নেতা ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের শত শত কর্মী এখন বাড়িছাড়া। প্রতিরাতে তাদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াতের শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দল দুটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর থেকে গত ৮ দিনে বন্দি বেড়েছে ১০৩ জন। এই নিয়ে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০৩ জন।
কারাগারের জেলার শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীন হায়দার জানান, ঝিনাইদহ জেলা কারাগারটি ৩৮২ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। অথচ কারাগারে বন্দি আছে ৭০৩ জন। অতিরিক্ত ৩২১ জন বন্দি বেশি রয়েছে কারাগারটিতে। অতিরিক্ত বন্দি থাকার বিষয়ে ঝিনাইদহ কারাগারের মহিলা ডেপুটি জেলার তানিয়া জামান বলেন, অতিরিক্ত বন্দি থাকলেও এখানে কোনো সমস্যা নেই। বন্দিদের খাবারসহ যাবতীয় সমস্যা বিধি মোতাবেক সমাধান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন নতুন বন্দি কারাগারে আসার পর তাদের জন্য সরকারিভাবে খাবারও বরাদ্দ থাকছে। এদিকে বন্দিরা বলছেন, কারাগারে খাবারের মান নিম্নমানের। কারাভ্যন্তরের ক্যান্টিনে ১০ গুণ দামে খাবার বিক্রি করা হয়। সিএস ফাইলের নামে বন্দিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আবার আসামি জামিনের পর জমাকৃত সিএস ফাইলের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জামিন নিয়ে ঝিনাইদহ কারাগার থেকে বের হয়ে আসা ব্যক্তিরা জানান, কারাগারের ক্যান্টিনে গরুর গোস্ত ১ হাজার ২৬০ টাকা কেজি। প্রতি পিসের দাম ধরা হয় ৭০ টাকা। পোল্ট্রি মুরগীর প্রতি পিস ৪০ টাকা। সেই হিসেবে কেজি পড়ে ৯৬০ টাকা ও মাছ প্রতি পিস ৫০ গ্রাম ওজনের ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। কারা ক্যান্টিনে অতিরিক্ত দাম নিলেও খাবারের মান ভালো নয় বলে সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন। এই ক্যান্টিনের লাভের টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হয় নাকি সরকারি কোষাগারে জমা হয়, তা কেউ বলতে পারেনি।
এ বিষয়ে কারাগারের জেলার শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীন হায়দার জানান, সারা দেশের মতো এখানেও একই নিয়মে ক্যান্টিন পরিচালনা করা হয়। বাইরের থেকে এখানে দাম বেশি এটা সত্য। তিনি জানান, কারা ক্যান্টিন পরিচালনা করতে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটিতে জেল সুপারসহ কারা কর্মকর্তা রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ক্যান্টিন চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সাইদুল আলম জানান, আধুনিক সমাজে কারাগার মানেই শাস্তির জায়গা নয়, কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। কারাগারে যেহেতু বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি, সেক্ষেত্রে বন্দিদের অসুবিধা হবে এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ একজন বন্দি আগে যতটুকু বিছানার মধ্যে থাকতে পারতো, বর্তমানে আরও কয়েকজনকে নিয়ে একই স্থানে থাকতে হচ্ছে। এতে করে বন্দিদের কারাগারে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দিদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।