বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

২২ মাথাওয়ালা খেজুর গাছ!

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ২২ মাথাওয়ালা খেজুর গাছ নিয়ে বর্তমানে শোরগোল পড়ে গেছে। আর এই গাছটি দেখতে প্রতিদিন নানাস্থান থেকে ছুটে যাচ্ছেন উৎসুক জনতা। তবে গাছটি নিয়ে এলাকা জুড়ে প্রচলিত হয়েছে নানা ধারণা। অনেকে মনে করছেন গাছটি অলৌকিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিভিন্ন মনের বাসনা পূরণের জন্য মানত করে যাচ্ছেন। কেউবা রোগমুক্তি কামনার জন্য ছুটে আসছেন। গাছটি কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের বহরামপুর গ্রামের কাজী সোলায়মান হোসেনের জমিতে অবস্থিত।

জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে কোটচাঁদপুর উপজেলার বহরামপুরের কৃষক কাজী সোলায়মানের জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় এই খেজুর গাছটি। একটু বড় হলে রস আহরণের জন্য গাছটি কাটেন সোলাইমান। শুরুর দিকে এ গাছ থেকে রস আহরণ করলেও একাধিক মাথা গজানোয় পরে ওই গাছ থেকে রস সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়ে। আগে ৩০/৩৫ টি মাথা থাকলেও এখন দৃশ্যমান রয়েছে ২টি। আর সতেজ রয়েছে ১৪টি মাথা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে রংতুলিতে আঁকা কোনো এক শিল্পীর নিপুন হাতের কারুকাজ।

অবাক করার বিষয় হলো, মূল কাণ্ড থেকে ২২টি মাথা নিয়ে আশপাশের অন্যান্য গাছের মতোই আকাশ পানে মাথা উঁচু করে সোজা দাঁড়িয়ে আছে খেজুর গাছটি। বিষয়টি অদ্ভুত এবং অলৌকিক মনে করছেন অনেকেই। গাছটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন কৌতুহলী মানুষ।

বহরামপুর গ্রামের মাঠের কৃষক আমজাদ হোসেনের জানান, ৩০ বছর আগে কাজী সোলায়মান হোসেনের এই জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় একটি খেজুর গাছ। গাছটি রস দেওয়ার মতো উপযুক্ত হলে কোনো এক শীত মৌসুম সামনে রেখে রস সংগ্রহের জন্য গাছ কাটেন ওই কৃষক। এভাবে প্রায় দশ বছর রস সংগ্রহ করেন। এরপরের বছর ওই খেজুর গাছে শুরু হয় মাথা গজানো। তারপর আর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এভাবে মাথা গজাতে গজাতে একে একে ৩৫ টার অধিক মাথা গজায়। ৪/৫ বছর আগে ১৩টা মাথা শুকিয়ে মারা যায়। এখন ২২টা মাথা থাকলেও সতেজ আছে ১৪ টা মাথা।

স্থানীয় আরেক কৃষক মুনছুর আলী বিশ্বাস বলেন, কাজী সোলায়মান হোসেনের বহু মাথার খেজুর গাছ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থী, মিডিয়া কর্মীসহ সব বয়সের মানুষ এখানে আসেন। বিকেল বেলায় লোক সমাগম একটু বেশি হয়। এই ধরনের খেজুর গাছ সচরাচর দেখা যায় না এজন্য মানুষ এখানে আসেন। কিছু স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরাও এখানে আসে এবং গাছের পাশে ছবি তোলে। আমার মনে হয় উৎসুক মানুষের জন্য এই স্থানটা একটু পরিপাটি করলে মানুষ এখানে এসে অবসর সময় পার করবে।

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেকেন্দার আলী বলেন, এটা আসলে অলৌকিক কিছু নয়। আমরা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় খেজুর গাছ, তালগাছ ও সুপারিগাছ এই সমস্ত গাছের কোনো শাখা-প্রশাখা থাকে না। এই ধরনের গাছকে এক বীজপত্রী গাছ বলে থাকি। এই ধরনের গাছে এক ধরনের ফাইটো হরমোন অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃস্বরণের কারণে অনেক সময় এমনটি হয়। তবে সচরাচর এমনটি দেখা যায় না। অনেকেই গাছটি অলৌকিক মনে করে রোগমুক্তি কামনা ও শুভ কিছুর আশায় মানতও করে থাকেন। যা আধুনিক মনস্করা ভাষায় পাগলামিও বলা যায়।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular