নিউজ ডেস্ক:
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বিলিয়ন ডলারের খাদ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
গত বুধবার রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা সম্মেলন-২০১৭ এর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম।
প্রথমবারের মতো আয়েজিত দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ : সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উদ্যোক্তারা ২২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছেন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২৭ মিলিয়ন ডলার। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হব। নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা শুধু আইনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এটি সরকারের একার পক্ষেও সম্ভব নয়। এজন্য খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহণ, বিপণন, সংরক্ষণ, খাদ্য পরিবেশন ও খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ সবজি উৎপাদনকারী দেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখন চাল, মিঠা পানির মাছ এবং ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তার বিধান আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাচ্ছি, তা কতটুকু নিরাপদ -এ ব্যাপারে বরাবরই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। জনবহুল বাংলাদেশে এ ধরনের নিশ্চয়তা প্রদান কঠিন হলেও আমাদের সরকার শুরু থেকেই এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে।
আমির হোসেন আমু বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবছর হালাল খাদ্য ও পণ্যের চাহিদা ১০.৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০১৪ সালে বিশ্বে হালাল শিল্পের পরিমাণ ছিল ৭৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সাল নাগাদ বিশ্বে হালাল শিল্পের পরিমাণ ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হবে। হালাল খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের জন্য গুণগতমানের খাদ্য শিল্প প্রসারের সুযোগ এনে দিয়েছে। এ ধরনের শিল্প স্থাপন করে একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরাপদ খাদ্যের যোগান বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৫ লাখ ব্যবসায়ী খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ১৫ লাখ সরাসরি এবং বাকীরা পরোক্ষভাবে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত। দেশে ২৪৬টি উন্নতমানের মাঝারি আকারের খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যখাতের উন্নয়নে ইতিমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকার রপ্তানির বিপরীতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে আসছে। ফলে দেশে দ্রুত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাত বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিধিমালা প্রস্তুত করেছি। আমরা উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবার টেবিল পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দিতে চাই। বিদেশের মানুষ রাস্তার পাশের খাবারও নিরাপদ মনে করে খায়। আমাদের দেশেও সব খাবারে সেই আস্থা অর্জন করতে চাই। এ লক্ষ্যে কাজ করেছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কায়কোবাদ হোসেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. নাউকি, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রুপালী চৌধুরী ও এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।