পবিত্র কাবাঘরের চাবিরক্ষক ড. শায়খ সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শায়বি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন পবিত্র কাবাঘরের ১০৯তম চাবিরক্ষক।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে মক্কায় মারা যান তিনি। পরদিন শনিবার (২২ জুন) ফজরের নামাজের পর পবিত্র মসজিদুল হারামে জানাজার পর তাঁকে জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়।
শায়খ সালেহ আল-শায়বির দায়িত্বের ছিল, পবিত্র কাবাঘরের দরজা খোলা ও বন্ধ করা, ধৌত করা, কাবাঘরের গিলাফ (কিসওয়া) পরিবর্তন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করাসহ মসজিদে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো।
এদিকে পবিত্র কাবাঘরের ১১০তম চাবি বাহক কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে সৌদি সংবাদমাধ্যমে কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাদের একজন হলেন আবদুর রহমান এবং অন্যজন হলেন আবদুল মালিক আল-শায়বি। এক্ষেত্রে বংশের প্রবীণতম ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া হয়। অবশ্য নিয়োগের চূড়ান্ত বিষয়টি সৌদি রাজকীয় আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
গত পাঁচ বছর ধরে সালেহ আল-শায়বির সহকারী হিসেবে তাঁর ছেলে আবদুর রহমান কাজ করেন। এরপর তাঁর চাচাতো ভাই আবদুল মালিক আল-শায়বি সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সালেহ আল-শায়বির ছেলে আবদুর রহমান জানান, তাঁর পিতা চাইতেন, পবিত্র কাবাঘরের চাবি ও তত্ত্বাবধান তাঁর (ছেলে) কাছে হোক। তবে তাঁর (পিতার) ইচ্ছাকে সম্মান জানানো না হলে পবিত্র এ ঘরের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাঁর চাচা আবদুল ওয়াহাব আল-শায়বির হাতে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাবাকে বিদায় জানানো জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও দুঃখজনক মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি। কিছুদিন আমার বাবা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তবে তাঁর ধৈর্যশক্তি ছিল খুবই প্রবল। তিনি ছিলেন দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। আমার পরিবার এমন একজন মানুষের জন্য আল্লাহর ইচ্ছা মেনে নিয়েছে যিনি সর্বদা সবার কাছাকাছি ছিলেন এবং পরিবারের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ’
সালেহ আল-শায়বির ছেলে আবদুর রহমান আল-শায়বি বলেন, বাবাকে বিদায় জানানো জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও দুঃখজনক মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি। কিছুদিন আমার বাবা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তবে তাঁর ধৈর্যশক্তি ছিল খুবই প্রবল। তিনি ছিলেন দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। আমার পরিবার এমন একজন মানুষের জন্য আল্লাহর ইচ্ছা মেনে নিয়েছে যিনি সর্বদা সবার কাছাকাছি ছিলেন এবং পরিবারের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ড. সালেহ আল-শায়বি ১৩৬৬ হিজরি সালে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী মক্কার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ড. সালেহ মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলাম শিক্ষা পিএইচডি গ্রহণ করেন। এরপর দুই দশকের বেশি সময় সেখানে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ সালে তাঁর চাচা শায়খ আবদুল কাদির আল-শায়বির সহকারী হয়ে পবিত্র কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তাঁর চাচার মৃত্যুর পর তিনি প্রধান চাবি রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন থেকে আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এ সময়ে তিনি শতাধিক বার পবিত্র কাবাঘর পরিচ্ছন্নতা ও ধৌত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা বিজয়কাল থেকে ৭৭তম এবং তাঁর পূর্বপুরুষ কুসাই বিন কিলাব-এর যুগ থেকে ১০৯ তম চাবিরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. সালেহ আল-শায়বি। তিনি বিখ্যাত সাহাবি উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর বংশধর ছিলেন। যাঁর ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘হে তালহার বংশধর, তোমরা এ চাবি গ্রহণ করো। তোমাদের কাছে তা থাকবে। অত্যাচারি ছাড়া কেউ তা ছিনিয়ে নেবে না। ’
মূলত জাহেলি যুগ থেকেই কাবাঘরের চাবি শায়বা গোত্রের কাছে থাকত। অষ্টম হিজরি তথা ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই ওই গোত্রের উসমান ইবনে তালহার (রা.) কাছে চাবি হস্তান্তর করে তাকে সম্মানিত করেন। এরপর থেকে তাঁর বংশধরেরা ওই চাবি সংরক্ষণ করছেন। বর্তমান সময়ে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন।