চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. এহসানুল হক তন্ময়ের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। নিজের খেয়াল খুশি মতো ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়ায় ভর্তিরত রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। এছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ডিউটি করবেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ওয়ার্ডে রাউন্ড শেষে আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা দেবেন। তবে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে।
কয়েকদিন সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন যাবৎ ডা. এহসানুল হক তন্ময় সময়মতো ওয়ার্ডে রাউন্ডে আসছেন না। সকাল ১০টার আগে তিনি আসেন না ওয়ার্ডে। কোনো দিন দুপুর ১২টার পরও আসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার বাবা গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। গত মঙ্গলবার ডা. তন্ময় রাউন্ডে আসেননি। বুধবার বেলা একটার দিকে তিনি রাউন্ডে আসেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত সোমবার তিনি আমার বাবাকে একটি পরীক্ষা করতে দেন এবং বলেন রিপোর্ট না দেখা পর্যন্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এরপর তিনি সেই রাতে আসেননি এবং পরদিনও আসেননি। আমার বাবা না খেয়ে একদিন পার করেছেন। তিনি নিজ ইচ্ছেমতো আসেন। এতে রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
এদিকে, রাউন্ডে দেরি করলে আউটডোরের রোগীরা চিকিৎসা না নিয়ে অনেকেই ফিরে যান বাড়িতে। কারণ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আউটডোরে রোগী দেখার শেষ সময়। এছাড়া রাউন্ডে দেরিতে আসার কারণে সদর হাসপাতাল রাজস্ব হারাতে বসেছে। রোগীর স্বজনরা বলছেন, তিনি সঠিক সময়ে রাউন্ডে আসলে যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন, তা হাসপাতাল থেকেই করাতে পারেন। এতে রোগীদের কিছুটা সাশ্রয় হয়। তবে তিনি দেরিতে আসায় বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান রোগীরা। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সদর হাসপাতাল।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর হাসপাতালের কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘ডা. তন্ময় অনিয়মিতভাবে রাউন্ডে আসেন। এতে নার্স, রোগী ও স্বজনদের অনেকের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া সকাল সকাল না আসার কারণে যেসব রোগীরা ছাড়পত্র পান, তার সরকারিভাবে ওষুধ উত্তোলন করতে পারেন না। কারণ ছাড়পত্র দিতে দিতে বেলা দুটো পার হয়ে যায়।’ সদর হাসপাতালের বেশ কিছু স্বাস্থ্য কর্মীর অভিযোগ, ডা. তন্ময় স্বেচ্ছাচারিতা করলেও সিভিল সার্জন কিছুই বলেন না।
অপর দিকে, ইমরান হুসাইন নামের এক যুবক নিজের মায়ের কিচিৎসার জন্য ডা. এহসানূল হক তন্ময়ের নিকট থেকে কীভাবে ভোগান্তির শিকার হন, গত ১৪ অক্টোবর রাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তা বর্ণনা করেন একটি পোস্ট করে। তিনি লেখেন, ‘দয়া করে লেখাটা সবাই একটু মনোযোগ সহকারে পড়বেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের ০৩/০৯/২৪ তারিখে আমার মায়ের ডান হাতের তালুতে বাঁশের একটি অংশ ফুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখায়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়। তিনি আমার মায়ের হাত দেখে বলেন যে হাতের ভেতরে কিছু নেই। আমি তারপর বললাম যে এক্স-রে ছাড়া কীভাবে বলছেন কিছু নেই? জবাবে তিনি বলেন, তুমি ডাক্তার না আমি? এ বলে শুধু ওষুধ লিখে দেন। সাথে আরও বলেন, যদি খুব বেশি সমস্যা হয়, দুদিন পরে চেম্বারে দেখাতে। এরপর ওষুধ খাওয়ার পরেও মায়ের হাতের অবস্থার অবনতি হলে আমি তৎক্ষণাৎ মাকে তার চেম্বারে নিয়ে যায়। এসময় তিনি হাত দেখে বলেন, ভেতরে ইনফেকশন হয়েছে, বাঁশের অংশ আছে, অপারেশন করা লাগবে। তারপর আমি বলি, আমার আম্মা হার্টের রোগী। তার হার্টের ভাল্ব অপারেশন করা। অপারেশন করার পরে তিনি কোনো ওষুধ খেতে পারেন না, ওষুধ খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়। তিনি আমার কথা শোনার পরে বলেন, কোনো সমস্যা নেই। হাতের ছোট অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ডাক্তারের কথামতো অপারেশন করতে রাজি হই এবং ০৫/০৯/২০২৪ তারিখে আম্মার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের তিন দিন পর তার হাটের সমস্যা দেখা দেয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখালে তাকে সাথে সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে দেয়। অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না, যার কারণে সেইখানে তিনি ছয় দিন সিসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় আসেন।
কিন্তু হাতের অপারেশনের জায়গাটা ঠিক না হয়ে ১৩ অক্টোবর রাতে ফুলে যায়। আজকে বেশি ফোলা দেখা দিলে হাত দিয়ে সামান্য চাপ দিতেই অপারেশনের স্থান থেকে রক্ত-পুজ এবং একটি বাঁশের চোচ বের হয়, যেটা বের করার জন্য অপারেশন করা হয়েছিল। তাহলে অপারেশন করে তিনি কী বের করলেন হাতের ভেতর থেকে? নাকি অপারেশনের নামে কাটাকাটি করলেন শুধু টাকা নেওয়ার জন্য? এমনকি আজকে তার সাথে কথা বললে তিনি তার ভুল স্বীকার করেননি। আমার এই লেখালেখির একটাই কারণ ডাক্তার যদি ভুল চিকিৎসা দেয়, আমরা সাধারণ মানুষ কাদের ওপর ভরসা করে হাসপাতালে যাব?’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. এহসানুল হক তন্ময়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মোবাইলে কোনো বক্তব্য দিতে আগ্রহী নই। আমার চেম্বারে আসেন, সামনা-সামনী বক্তব্য দেব।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।