হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণকারী সাহাবি

0
1
মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ গোত্রের বনু আসাদ শাখার সন্তান হাকিম ইবনে হিজাম (রা.)। পিতার নাম হিজাম ও মায়ের নাম সাফিয়্যা/ ফাখতাহ বিনতে যুহাইর হারিছ ইবনে আসাদ। একই সাথে তিনি উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (রা.)-এর ভাতিজা। যুবাইর ইবনে আউওয়াম (রা.) এর চাচাতো ভাই। জায়েদ ইবনে হারিছার খরিদকারী।

জন্মগ্রহণ ও তার বিরল ইতিহাস
হাকিম (রা.) ভূমিষ্ট হন পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে। একদা তাঁর মা অন্যান্য কুরাইশি নারীদের সঙ্গে কাবা শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। সেখানেই তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হয়। বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই সেখানেই একটি চামড়া বিছিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই তিনি হাকিমকে প্রসব করেন। ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে ভূমিষ্ট হন। এটা হস্তীবাহিনীর ১৩ বছর পূর্বের ঘটনা। তিনি নিজেই বলেন, ‘আমি আমুল ফিলের ১৩ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করি। আমার ফুফু খাদিজা (রা.) ছিলেন আমার থেকে দু’বছর বড়।’ রাসুল (সা.)-এর জন্ম আসহাবে ফিলের বছর। এ হিসেবে তিনি রাসুল (সা.) থেকে ১৩ বছর বড়। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/৪৬, আনসাবুল আশরাফ : ৯/৪৫৪)

হাকিম (রা.) মক্কার এক সম্পদশালী অভিজাত পরিবারে বেড়ে উঠেন। ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন তিনি একজন ভদ্র ও বুদ্ধিমান, যার কারণে কুরাইশরা তাঁকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। মক্কায় আগত হাজীদের দেখাশুনা ও আপ্যায়ন এবং দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করতেন।

ইসলাম গ্রহণ
৮ম হিজরী সনে মক্কাবিজয়ের সময় তিনি তাঁর সব সন্তানসহ ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ৭৪ বছর। সেদিন রাসুল (সা.) হাকিম ইবনে হিজামমর ঘরকেও আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ করেছিলেন, ‘যে আবু সুফিয়ান, হাকিম ইবনে হিজাম ও বুদাইল ইবনে ওয়ারক্বার ঘরে প্রবেশ করবে, সে মুসলিমবাহিনীর হামলা থেকে নিরাপদে থাকবে। এমনকি যে নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকবে, সেও নিরাপদ।’ এরপর হাকিম (রা.) হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাসুল (সা.) তাঁকে ‘মুআল্লাফাতুল কুলুব’-এর অন্তর্ভুক্ত করে হুনাইনের গনিমত থেকে ১০০ উট দেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/৪৪—৪৫, ৪৮, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৮/৬৮)

শুধু তাই নয়, ইসলামগ্রহণের পর তিনি একাধিক হজ করেছেন। এক হজে ১০০ উট আরেক হজে এক হাজার ছাগল কোরবানি করেন। আরেক হজে আরাফার ময়দানে ১০০ গোলাম আজাদ করেন। কোনো বর্ণনামতে এক হজেই এ সব করেছেন। (উসদুল গাবাহ : ১/৫২২, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৮/৬৯)

নবীজীর যবানে বরকতের দোয়া
একদা রাসুল (সা.) কোরবানির ছাগল ক্রয়ের জন্য একটি দিনার দিয়ে হাকিমকে বাজারে পাঠালেন। বাজারে গিয়ে তিনি এক দিনার দিয়ে একটি ছাগল ক্রয় করলেন। কিছুক্ষণ পর তা দুই দিনারে বিক্রি করলেন। অতপর এক দিনার দিয়ে একটি ছাগল ক্রয় করে অপর দিনারসহ রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলেন। তখন রাসুল (সা.) তাঁর ব্যবসায় বরকতের জন্য দোয়া করলেন এবং লাভের দিনারটি সদকা করে দিলেন। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে ‘উরওয়া ইবনে আবুল জাদ আল-বারিকি (রা.) এর বেলায়ও, যা হাদিসের প্রায় গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ইমাম আবু দাঊদ (রহ.) তাঁর সুনানে (২/৪৮০ পৃষ্ঠায়) ‘বাবু ফিল মুদারিবি ইউখালিফু’ অধ্যায়ে পর পর দুটি রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন। প্রথমটি ‘উরওয়া ইবনে আবুল জাদ আল-বারিকি (রা.) এর, দ্বিতীয়টি হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) এর।

ইন্তেকাল
হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনামলে ৫৪ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১২০ বছর। কেউ কেউ বলেছেন এই ১২০ বছরের মধ্যে ৬০ বছর ছিল জাহিলি জীবন আর ৬০ বছর ইসলামী জীবন। ‘উসদুল গাবাহ’ গ্রন্থকার ইবনে আছির (রহ.) বলেন, ‘তাঁদের এ উক্তি সঠিক নয়। সঠিক হলো, জাহিলি জীবন ৭৪ এবং ইসলামী জীবন ৪৬ বছর।’ (উসদুল গাবাহ : ১/৫২৩)

লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামী আলোচক ও গ্রন্থাকার