নিউজ ডেস্ক:
হাউজিং ব্যবসায়ীদের দিন কাটছে নানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে। দিন কাটছে হতাশায়। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর থেকে যে এ ব্যবসায় সঙ্কট চলছে তা আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বড় ব্যবসায়ীরা এখনো টিকে আছে তাদের বিপুল সম্পদ, দূরদর্শিতার সাথে বিনিয়োগ ও উৎস থেকে নির্মাণসামগ্রী ক্রয় করার কারণে। এদের আবার অনেকের শক্তিশালী গবেষণা সেলও রয়েছে। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীদের যারা শুধু নগদ প্রাপ্তি দেখে পরিণতির কথা চিন্তা না করে এ ব্যবসায় নেমেছিলেন তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে অফিস গুটিয়ে ফেলেছেন। কেউ অন্য খাতে চলে গেছেন। আবার অনেকে পথেও বসে গেছেন। আবার অনেকে মুনাফার কথা চিন্তা না করে টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন, ব্যবসা না গুটিয়ে টিকেও আছেন কোনো মতে এমন উদাহরণও আছে। তবে এপার্টমেন্টের দাম কয়েক দফা কমিয়েও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে ক্রেতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, ব্যবসা এখনো টিকে আছে, টিকিয়ে রেখেছি। কিভাবে টিকিয়ে রেখেছি তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে এখন কিছুটা আশার আলো দেখছি। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।
রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও শেলটেক লিমিটেডের এমডি ড. তৌফিক এম সেরাজ বলেছেন, আশা দেখছি। আবাসন খাত গত কয়েক বছরে বেশ সংশোধিত হয়েছে, এপার্টমেন্টের দাম কমাতে হয়েছে। অনেকেই টিকে থাকার জন্য কিছুটা লোকসানও দিয়েছেন। এভাবে টিকে আছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য রিহ্যাবের ভূমিকা বেশ ইতিবাচক। ব্যবসায় মন্দাবস্থা থাকলেও তারা প্রতি বছর শীতকালীন ‘মেলা’ করে যাচ্ছেন নিয়মিতভাবে। ক্রেতাকে বুঝতে দিতে চাননি যে, তাদের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ওই রিহ্যাব নেতা জানিয়েছেন, মানুষের টাকা যে একেবারেই নেই তা নয়। তারা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। রিহ্যাবের বার্ষিক মেলা ক্রেতাদের এ ভীতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।
বেচাকেনা যে অনেক আগেই শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। অফিস বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে বলে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। কোনো মাসে একটি ফ্ল্যাট বিক্রি না হলেও জনশক্তির বেতনভাতা দেয়াসহ অফিস চালানোর খরচও যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক মন্দা, নিরাপত্তাহীনতা, বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে আবাসন খাত বসে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। এই খাতের সাথে অন্যান্য শিল্পের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে।
রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি এই আবাসন শিল্পে এবং এর পশ্চাৎ শিল্পে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি অদক্ষ শ্রমিক কাজ করে এই খাতে। দক্ষ শ্রমিক অথবা প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন অন্যান্য পেশার মানুষ যারা এই খাতে কাজ করেন তাদের খুব বেশি সমস্যা না হলেও অদক্ষ শ্রমিকেরা কর্মসংস্থান হারালে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেও।
আবাসন ব্যবসায়ের সাথে সরাসরি জড়িত রড, সিমেন্ট, স্যানিটারি, বিদ্যুতের ক্যাবল, রংসহ বেশ কিছু শিল্প। এই শিল্পেও ধস নেমেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পশ্চাৎ শিল্পগুলো বন্ধ হয়েও গেছে বলে অভিযোগ করেছেন রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ।
রিয়েল এস্টেট সেক্টরের ভালো অবস্থা বিরাজ করছে কি না তা খুব সহজেই নিরূপণ করা যায় আবাসন ব্যবসায়ীদের একক মেলা আয়োজন দেখে। বিক্রি কমে গেলেই কোম্পানি এ রকম মেলা করে থাকে এবং বেশ ভালো অঙ্কের ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি বাড়াতে চেষ্টা করে। গত তিন-চার বছরে বাংলাদেশের বড় বেশ কয়েকটি কোম্পানি দেখা গেছে বছরে দু’বার থেকে তিনবার একক মেলার আয়োজন করতে। আবাসন শিল্পের ব্যবসায়ীদের মতে, কয়েক বছর যাবৎ এই শিল্পে পেট্রো ডলারই হোক আর মার্কিন ডলারই হোক আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
বৈদেশিক আয় এবং অভ্যন্তরীণ আয়Ñ এই দুই ধরনের টাকায় গড়ে ওঠা আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ করতে মানুষের শঙ্কা কাটেনি এখনো। এনবিআর অথবা দুদক তো আছেই। বেপরোয়া চাঁদাবাজির শিকার হওয়া। কেউ কোথাও কোনো এপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেছে এমন শুনলেই চাঁদাবাজরা ছুটে আসছে নানা সংগঠনের কথা বলে। চাঁদা দিতে না পারলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। চাঁদার হাত থেকে আবাসন শিল্পের মালিকরাও মুক্ত নন। তাদেরও বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা দিতে হয়। থানায় মামলা করে অথবা অন্য কোনোভাবে এদের ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।
এটা ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের এখন আর হাতে জমানো টাকা থাকছে না। উচ্চবেতনে যারা চাকরি করেন তারাই মূলত আবাসন ব্যবসায়ীদের ক্রেতা। ধারাবাহিকভাবে সব ধরনের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন খাতে তারা বাড়তি টাকা বিনিয়োগের চিন্তা করতে পারছে না।