শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় হলুদ রঙে সেজেছে বিভিন্ন গ্রাম। এ যেন হলুদের রাজ্য। সরিষা ফুলের মুগ্ধতা উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমিরা। এখানে চলতি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় চাষিরা।
মাঠে প্রান্তরে যেদিকে চোখ যাচ্ছে হলুদ রঙের সরিষা ফুলের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সাঁজ। দিগন্ত জোড়া মাঠে এখন শুধুই হলুদের সমারোহ। সরিষার ফুল থেকে মৌমাছিসহ বিভিন্ন পোকা-মাকড়, পাখির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। স্বল্প খরচে অল্প সময়ের মধ্যে সরিষার উৎপাদন বেশি হয়। তবে এবছর অনেক এলাকায় সরিষার আবাদ কম। যেখানে সরিষা উৎপাদন করার কথা ছিলো সেখানে ভুট্টা এবং কলা চাষ করছেন কৃষকরা।
এ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবং চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় চাষিরা। সরিষা উৎপাদনে সার কম প্রয়োগ করতে হয়। সেচ, নিড়ানী ও কীটনাশকের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। তাই অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এছাড়াও সরিষার আবাদের ফলে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২ শত ৪৪ হেক্টর। উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিরতণ করা হয়। এবার এই উপজেলায় বারি সরিষা-১৪, ১৭, বিনা-৪ এবং স্থানীয় জাতের চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছরই শ্রীবরদীতে সরিষার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা বোর ধানের জমিতে আগাম এই ফসলের চাষ করে কৃষকরা অতিরিক্ত মুনাফা ঘরে তুলছেন। কৃষক সাদ্দাম মিয়া, আজিজুল, রাজু মিয়ার সাথে কথা হলে তারা জানান, সরিষা মৌসুমে ধান চাষের উপযুক্ত জমিতে আমরা সরিষার আবাদ করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছি। অপরদিকে সরিষা তোলার পর আবার সেই জমিতে বোরো ধান রোপণ করা যায়। এতে করে আমরা অধিক লাভবান হচ্ছি।
এছাড়াও স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে আমাদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ জাকারিয়া খাঁন জাহিদ বলেন, শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার এই উপজেলায় সরিষার খুব ভালো ফলন হয়েছে।
প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হলে কৃষকরা ভালোভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাবরিনা আফরিন জানান, আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে সরিষা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন । মাত্র ৮০ থেকে ৮২ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়, সাথে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। কম খরচে বেশি লাভজনক ফসল সরিষা। উপজেলায় দিনদিন সরিষা চাষের আবাদ বেড়েই চলছে।