মোঃ সুমন আলী খান, হবিগঞ্জ থেকে: হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা শাবাজপুর গ্রামে সৎ মা ভাইয়ের হাতে রুহুল আমিন নামে ১০ বছরের এক শিশু নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ রুহুল আমিনের সৎ ভাই নাসির মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে রুহুল আমিনের সৎ মা জোস্না বেগম, জোস্না বেগমের বোন সেতেরা বেগম, গ্রেফতারকৃত নাসির মিয়ার স্ত্রী সুজানা বেগম। পারিবারিক বিরোধ এবং প্রতিপক্ষকে ফাসাতে শিশু রুহুল আমিনকে বালু চাপা দিয়ে খুন করা হয় বলে ধারনা করা হচ্ছে। হবিগঞ্জের আলোচিত বিউটি আক্তার হত্যাকান্ডের পর শিশু রুহুল আমিন হত্যাকান্ড নিয়েও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে দোষীদের ফাসি দাবী করেছেন নিহত রুহুল আমিনের মা বেদেনা বেগম। শিশু রুহুল আমিন হত্যাকান্ডের বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও তার সৎ ভাই নাসির মিয়া গ্রেফতারের পর হত্যাকান্ডের মূল মোটিভ উদ্ধার হতে শুরু করেছে।
জানা যায়, শিশু রুহুল আমিনের বাবা ছিদ্দিক আলী ২ বিয়ে করেন। ছিদ্দিক আলীর অপর স্ত্রী জোস্না বেগমের সাথে বনিবনা না হওয়ায় রুহুল আমিনের মা বেদেনা বেগম তার বাবার বাড়ি চুনারুঘাটের ডেওয়াতলী গ্রামে বসবাস করতেন। ছিদ্দিক আলীর গ্রামের বাড়ি শাবাজপুরে আদারিশার মাজারে ওরশ ও মেলা উপলক্ষে গত ২২ ফেব্রæয়ারী তারিখে ডেওয়াতলী থেকে শিশু রুহুল আমিন ও কন্যা সন্তান সুমাইয়া আক্তারকে বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে আসেন ছিদ্দিক আলী। এরপর শিশু রুহুল আমিন নিখোজ হয়। নিহত রুহুল আমিনের মাতা বেদেনা বেগম জানান- নিখোজ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে খোজ খবর নিতে থাকলে তার সতীন জোস্না বেগম তার বোন কথিত কবিরাজ সেতেরা বেগমের কাছে নিয়ে যান। কবিরাজ সেতেরা বেগম কথিত জ্বীনের মাধ্যমে তাকে জানান- “ তোমার ছেলে খুবই সুন্দর, তাই জ্বীন পরী তাকে নিয়ে গেছে। জ্বীন পরীরা তাকে আকাশে আকাশে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশি খোজাখুজি করলে আরও ক্ষতি হতে পারে।” পরে ২৭ ফেব্রæয়ারী তারিখে সতীন জোস্না বেগমের বসতবাড়ির একটি বালুর স্তুপ থেকে শিয়াল কুকুরের মাধ্যমে রুহুল আমিনের মৃত দেহের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর নিরক্ষর বেদেনা বেগমকে একটি লিখিত এজাহারে টিপসই দিতে বলে সতিন পুত্র নাসির মিয়া ও তার লোকজন। পরবর্তীতে দেখা যায় সতীনপুত্র নাসির মিয়া যে আব্দুল হাই হত্যা মামলার আসামী সেই মামলার বাদী পক্ষের লোকজনকে আসামী দেখানো হয়েছে। বেদেনা বেগম জানান- আমি পড়ালেখা জানিনা। মানসিকভাবে বিপর্যস্থ অবস্থায় আমার টিপসই নেয়া হয়। সেখানে কে আসামী কে বাদী আমাকে জানানো হয়নি। আমার শিশু পুত্রকে নাসির ও তার মা জোস্না বেগম এবং তাদের সহযোগিরা হত্যা করে তাদেরই বালুর স্তুপে রেখেছে। শিশু রুহুল আমিন নিখোজের পর নাসির মিয়া ও তার স্ত্রী সুজানা বেগম কিশোরগঞ্জে পালিয়ে যায়। অন্যরাও বাড়ি থেকে চলে যায়। ইতিমধ্যে পুলিশ নাসির মিয়াকে গ্রেফতার করে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ঘটনায় নাসির মিয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে জানিয়ে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা লিখিতভাবে জানিয়েছেন- নাসির মিয়াকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। শিশু রুহুল আমিন হত্যাকান্ডস্থলের ৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিপক্ষকে ফাসাতে গিয়ে আপনজনদের হাতে অন্তত ৪টি লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। যার প্রায় প্রত্যেকটির প্রথমে বাদী ছিল পরিবারের ঘনিষ্টজন। পরে বাদী ও স্বাক্ষীরাই মামলা গুলোর আসামী শ্রেণীভূক্ত হয়েছে।