মোঃ সুমন আলী খান, হবিগঞ্জ থেকে: হবিগঞ্জ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও সঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। হবিগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হবে বলে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫শ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৫শ হেক্টর বেশী। ইতিমধ্যে হাওরাঞ্চলের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে অধিকাংশ জমির ধান এখনো আধা পাকা রয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা। এদিকে অকাল বন্যা বা প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কিছু কাঁচা থাকা অবস্থায়ই ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ধান কাটা শ্রমিক। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সংকট দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিকের। কৃষকদের আশঙ্কা শ্রমিক পাওয়া না গেলে মাঠেই পড়ে থাকবে তাদের সোনালি ফসল। অথবা ফসল উঠাতে পারলেও চড়া মুল্যে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে গিয়ে আয়ের চেয়ে ব্যয়ই বেশি হবে বলেও ভাবনায় পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে শ্রমিক সংকট অন্যদিকে গত ক’দিনের বৃষ্টিতে আবারো হাওর তলিয়ে যাওয়ার সঙ্কায় কৃষকরা।
জেলার হাওর বেষ্টিত বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর, লাখাই এবং নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার একাংশ কৃষক পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস বোরো ধান। বছরের ৬ মাস কৃষি কাজ আর বাকী ৬ মাস হাওরে মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাওর পাড়ের ৮০ ভাগ লোক। প্রতি বছর বোরো ধান ঘরে তোলার সময় হাওরে একের পর এক সমস্যা লেগেই থাকে। গত বছরের সম্পূর্ণ বোরো ধান হারানোর পর পর ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এবার একটু দেরিতে চাষাবাদ করতে হয়েছে কৃষকদের। হাওরে মাঠে মাঠে এখন কৃষকের মুখে হাসি। পাকতে শুরু করেছে বোরো ধান। জেলার কিছু কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরুও করেছেন কৃষকরা। আবার ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক পরিবার। তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারো দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিক তীব্র সঙ্কট। ঠিক সময়ে ধান ঘরে তুলতে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে কৃষকদের। একদিকে শ্রমিক সংকট অন্য দিকে অতিবৃষ্টিতে আবারো হাওর তলিয়ে যাওয়ার সঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। হবিগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার এবার ১ লাখ ২০ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। ধান কাটার শ্রমিকরা জানান, এখন তারা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে তাদের ব্যস্ততা আরো বাড়বে। এজন্য শ্রমিক সঙ্কটকে দায়ি করলেন তারাও। সুজাতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এনাম খান চৌধুরী ফরিদ জানান, এ বছর ধানের ফলন বেশী হলেও শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে। আগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেধে শ্রমিকরা হাওড় পাড়ে ধান কাটার জন্য আসলেও গত কয়েক বছর ধরে অকাল বন্যায় বোরো ধান কাটতে শ্রমিকরা আসতে চাচ্ছেন না। বেশী টাকা দিলেও রাজি হচ্ছেন না তারা। শ্রমিক সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ বলেন, শ্রমিক সঙ্কট আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসলেও গত কয়েক বছর ধরে খুব একটা শ্রমিক আসেন না। তাছাড়া উপজেলার হাওরে ধান কাটা শুরু করেছে বিক্ষিপ্তভাবে। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ হাওরের ধান কাটার উপযুক্ত হবে। আর ওই সময়টাতেই শ্রমিক সঙ্কটটা আরো বৃদ্ধি পায়। যার ফলে উচ্চ মূল্য দিয়ে শ্রমিক আনতে হয় কৃষকদের। তবে সঙ্কট নিরসনে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প এলাকার শ্রমিকদের পুরো বৈশাখ মাস বোরো ধান কাটার কাজে আসতে বলেছি। তারা যদি আসে তাহলে শ্রমিক সঙ্কট অনেকটাই কমে যাবে।