চুয়াডাঙ্গার সরিষাডাঙ্গায় প্রেম করে বিয়ে : ছেলের পরিবার মেনে না নেয়ায় বিপত্তি
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সরিষাডাঙ্গায় শ্বশুর বাড়িতেই তিন মাসের অন্তসত্বা স্ত্রীকে হত্যার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ফজলুর বিরুদ্ধে। গত শনিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মর্গে নেয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করেনি পুলিশ। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মাস আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সরিষাডাঙ্গা গ্রামের উত্তরপাড়ার হাসান আলীর ছেলে ফজলুর (২৩) সাথে একই এলাকার প্রবাসী চাঁদ আলীর বড় মেয়ে চন্দনা খাতুন (১৯) প্রেম করে বিবাহ করে। এতে মেয়ের পরিবার মেনে নিলেও ছেলের পরিবার মানতে নারাজ। কারণ হিসাবে জানা গেছে, ফজলুর প্রথম বিবাহ হলেও চন্দনা খাতুনের আগে দু’বার বিয়ে হয়েছিল। এ জন্য ছেলের পরিবার মেনে নেইনি।
নিহত চন্দনা খাতুনের মা বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতেই পারেনা। আমার মেয়েকে হত্যার পর ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখেছে ঘাতক জামাই ফজলু। ঘটনার দিন রাতে আমি আত্মীয় বাড়ি ছিলাম। আমার মেয়ে ও তার দাদি ছিল বাড়িতে। বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে পুত্রবধু হিসাবে মেনে নেইনি ছেলের পরিবার। এ নিয়ে আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন ও মারধর করতো। গত ৮ দিন আগে আমার জামাই মেয়েকে নিয়ে আমার বাড়িতে উঠে। তারপর আমার বাড়িতেই থাকতো জামাই।
মেয়ের দাদি বলেন, গত রোববার রাত ১১টার দিকে জামাই ফজলু বাড়িতে আসে। ভোর রাতে আমাকে ডেকে বলে চন্দনা সিলিং ফ্যানের সাথে গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি তাড়াতাড়ি ঘরে এসে দেখি আমার নাতনি ফ্যানের সাথে ঝুলছে। পরে চন্দনার মরদেহ উদ্ধার করে মাটিতে নামানো হয়। তিনি আরো বলেন, আমার নাতনি মুখে আঙুলের ছাপ ছিল এবং সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। ফজলু আমার নাতিকে মেরে ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী বলেন, নিহত চন্দনা খাতুনে এটা তৃতীয় বিয়ে। বছর তিনেক আগে একই ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের শাহিনের সাথে বিবাহ হয়। বছর খানেক পর তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। এসময় ঘাতক ফজলুর সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে চন্দনা খাতুনের। বিষয়টি বুঝতে পেরে শাহিন চন্দনাকে তালাক দিয়ে দেয়। তারপর চন্দনা ঢাকায় চলে যায়। সেখানেও একটি বিয়ে করে চন্দনা। ফজলুর সাথে যোগাযোগ থাকায় এ বিয়েও বেশিদিন টেকিনি। পরে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে ৮ মাস পূর্বে ফজলুকে বিয়ে করে চন্দনা। তবে চন্দনার পরিবার জামাই হিসাবে ফজলুকে মেনে নিলেও পুত্রবধু হিসাবে ফজলুর পরিবার মানতে নারাজ। এ নিয়ে নিত্যদিনই গ-গোল হতো বলে জানায় এলাকাবাসী।
এদিকে ঘাতক ফজলুর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে চন্দনার কোন প্রকার ঝামেলা ছিলোনা। ওই রাতে আমি ও আমার স্ত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর রাতে টের পেয়ে আমার স্ত্রীকে পাশে না পেয়ে উঠে দেখি ফ্যানের সাথে ওঁড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে আমার দাদি শ্বাশুড়িকে ডেকে তুলে চন্দনাকে নিয়ে নামায়। তবে আমি তাকে মারধরও করিনি এবং আমরা দু’জন খুব সুখে ছিলাম বলে জানায়।
অন্যদিকে, খবর পেয়ে গতকাল সকালে সদর থানার উপ-পরিদর্শক বিএম আফজাল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে চন্দনার লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নেই। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। উপ-পরিদর্শক বিএম আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। হত্যার পর লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বিছানা থেকে ফ্যানের দূরত্ব এতই কম যে কেউ ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করলে বিছানায় পা ঠেকবে। তবে এর প্রকৃত রহস্য ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই জানা যাবে। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। এ বিষয়ে গতকাল সদর থানাই একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, গতকাল রাত ৮টার চন্দনার মরদেহ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পূর্ণ করা হয়।