বায়েজীদ (গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি) :
সোনালি আঁশ পাট উত্তরের জেলা গাইবান্ধার প্রচলিত আবাদের একটি বড় অংশ। সোনাফলা ফসলের মাঠে পাট আবাদ হবে না এমনটা ভাবতেই পারেননা এখানকার কৃষক। করোনাকালে এবার বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন গাইবান্ধার চাষিরা। কৃষিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পারলে এর প্রভাব পড়বে বছরজুড়ে। তিন দফা বন্যায় জেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বীজতলা, আউশের ক্ষেত, সবজি বাগান, চীনাবাদাম, কাউন, তিল ও মরিচসহ ২ হাজার ৫শ’ ৩৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৯শ’ ১৩ হেক্টর জমির পাটের আবাদ সম্পুর্ণ নষ্ট হয়েছে। তবে জেলার ১৩ হাজার ৮৭ হেক্টর জমির পাটের আবাদ বানের ছোবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাই সোনালী আঁশে সম্ভাবনার রোদ দেখছেন চাষিরা।
পাট কাটার মৌসুম প্রায় শেষ হলেও বানের পানি নেমে যাওয়ার পর পাট কেটে ছাল পচাতে জাগ দিচ্ছেন তারা। এরপর পাটের আঁশ ছাড়িয়ে, আঁশ ধোয়া ও শুকিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান এ অঞ্চলের কৃষকরা। পাট এখানকার গ্রামীণ জনপদের পারিবারিক জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাটের কিছুই ফেলনা নয়। পাটকাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো, আঁশ ধোয়া ও রোদে শুকানো সবমিলিয়ে পাট হাটে নিতে কৃষকের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তাই পাট নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে চাষিদের। করোনা আর দীর্ঘায়িত বন্যার ধকল কাটিয়ে সোনালী আঁশে সোনালী স্বপ্নের দিন গুনছেন তারা।
তবে সরকারি পাটকল বন্ধে পাটের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে যত কম দামে পাট কেনা যায় সে লক্ষ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে বেসরকারী পাটকলগুলো। সোনালী আঁশে যে লাভের সোনালী স্বপ্ন দেখছেন কৃষক, বাজারে পাটের ন্যায্য দাম না পেলে সে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার শঙ্কা রয়েছে তাদের। পাট দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলেও সরকারীভাবে ধান-চালের মত পাটের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে হাট-বাজারগুলোতে মধ্যস্বত্তভোগী পাট কারবারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ভাল দাম পাবার আশায় হাটে-বাজারে পাট আনলেও কাংখিত দাম না মেলায় হতাশ হয়ে ফিরে যায় কৃষক।
কৃষকেরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সারা দেশে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। পাটের আবাদ করতে বিঘাপ্রতি সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট উৎপাদন হয়েছে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ। তবে ধানের মতো বাজারে পাটের দাম কমে গেলে তাঁদের সীমাহীন ক্ষতি হবে। তাই চাষিরা পাটের ন্যায্যমূল্য পেতে চলতি মৌসুমে দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সোমবার (১০ আগস্ট) সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের আনালেরতাড়ী গ্রামের পাটচাষি প্রফুল্ল বর্মনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গতবারের মতো এবারও ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নে গিয়ে কথা হয় উত্তর গিদারী গ্রামের পাটচাষি সাদেকুল মাস্টারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার দুই বিঘা বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বাজারে পাটের যে দাম রয়েছে, এই দাম অব্যাহত থাকলে হয়তো কৃষকেরা এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন।
ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের পাটচাষি আ. খালেক বলেন, গতবারের চেয়ে এবার পাটের মান যেমন ভালো হয়েছে, তেমন উৎপাদনও ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবার আবাদ ভালো হয়েছে। এখন বাজারদর ঠিক থাকলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আর দাম ভালো পেলে আবারও সোনালি আঁশের সুদিন ফিরবে। ভবিষ্যতে আরও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হবে।