এছাড়া দুর্গন্ধে এই নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে চলা দায় হয়ে পড়েছে বলে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। দ্রুত অবৈধ স্থাপনা ও ময়লা অপসারণের দাবি জানান পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে পরিবেশ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন।
জানা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা এই মারীখালি নদীতে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকা চলত। উপজেলার বৈদ্যেরবাজার, পিরোজপুর, মোগরাপাড়া ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ কৃষিকাজ, গোসলসহ গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করত। এখন পানি ব্যবহার করাতো দূরে থাক, ময়লার গন্ধে এই নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়েছে।
বৈদ্যেরবাজার থেকে কাইকারটেক হাট পর্যন্ত নদীর উত্তর পাশে উদ্ধবগঞ্জ বাজার, সোনারগাঁও ডাকঘর, সোনারগাঁ থানা ভবন, আয়শা আমজাদ ক্লিনিক, মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় কাঁচা বাজার, মোগরাপাড়া বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়, মোগরাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোগরাপাড়া কাঁচা বাজার, সোনারগাঁ সরকারী কলেজ ও কাইকারটেক হাট অবস্থিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন মারীখালিতে হাট বাজারের বর্জ্য ফেলায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দখল, ভরাট ও দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নদীটি। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই-চার বছরের মধ্যেই নদীটি পুরোপুরি হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর দুই পাড় দখল করে দোকানপাট, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে পানির প্রবাহ বন্ধসহ ময়লা-আবর্জনা ফেলা অব্যাহত রেখেছে। এতে মারীখালি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মারীখালি নদীর স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার, সাহাপুর, উদ্ধবগঞ্জ, ভবনাথপুর, মেন্দীভিটা, ভাটিবন্দর, কোম্পানীগঞ্জ, হাবিবপুর, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও সোনারগাঁও সরকারী কলেজ পর্যন্ত মারীখালি নদীর উভয় তীরের এক তৃতীয়াংশ জায়গা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে গেছে। এবং সেখানে ঘরবাড়ি অস্থায়ী-স্থায়ী দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছেন।
উদ্ধবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব, বাচ্চু মিয়া, কবির হোসেন, অজয় পাল ও সাজাহান মিয়া বলেন, বর্তমানে নদীর পানির দুর্গন্ধে এলাকায় থাকা যায় না। এছাড়া নদী থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে নদীটি পুনর্খনন করার জন্য কর্তৃপক্ষের সুনজর দেওয়া দরকার। তাদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন এ বিষয়ে জানান, প্রতিদিন সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও হাটবাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় মারীখালি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর পানি প্রবাহ গতিশীল করা এবং পুনর্খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া দূষণ রোধে ও নদী রক্ষায় মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ময়লার ভাগাড়ের পাশে সাইনবোর্ড ও ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত শাখা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। দূষণ রোদে ও নদী রক্ষায় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, মারীখালী নদী দূষণের বিষয়ে তিনি অবগত নন। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস আনোয়ার জানান, নারায়ণগঞ্জে সদ্য যোগদান করেছেন তিনি। সোনারগাঁয়ে মারীখালি নদী দূষণের ব্যাপারে সরেজমিন গিয়ে দূষণরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।