মিয়ানমারের সংঘাতের জের ধরে চলাচল পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফে নাফনদীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে টেকনাফের কোনো নৌযান যেন বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় না যায় তার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে যাত্রীবাহী নৌযান কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় চলাচল করবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, নাফনদীতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তা গত সরকারের আমল থেকে কার্যকর। এখনও নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে নাফনদী দিয়ে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনভাবেই যেন বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের কাছাকাছি না যায়, তার জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ট্রলার মালিক, জেলেদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলবে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায়। এর জন্য সকল নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।
গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরও শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এরপর নাফনদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে আরাকান আর্মি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি সফলভাবে রাখাইন রাজ্যের মংডু অঞ্চলের সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশনের (৫ নম্বর) শেষ অবশিষ্ট ফাঁড়িটি দখল করে এবং নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
এতে সামরিক জান্তার সশস্ত্র সদস্য, তাদের সহযোগী আরএসও, আরসা, এআরএ সদস্যরা এখনও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তারা অতর্কিত হামলা অব্যাহত রেখেছে। যা শুরু মাত্র ৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের কাছাকাছি এলাকায় না। মংডু অঞ্চলের অন্যান্য অংশেও এমন হামলা হচ্ছে। তাই সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং জননিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে নাফ নদীতে (রাখাইন প্রান্তে) সমস্ত নদী পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণের পর কোনো শব্দ শোনা না গেলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম জানিয়েছেন, সোমবার থেকে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে তা আগের মতো বিকট না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এবং তা অতটা বিকট না।
এর পরিস্থিতিতে নাফনদীর বাংলাদেশ অংশে টহল জোরদার রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ-২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।