নিউজ ডেস্ক:
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, গ্রাম্য সালিশদার, মেম্বর, চেয়ারম্যানদের প্রকাশ্যে বিচারে মাথার চুল কেটে দেওয়া, কান ধরে ওঠবস করানো, নাকে খত দেওয়া, গলায় জুতার মালা পরানো, ঝাড়ু পেটা করে বাজারে ঘুরানো ইত্যাদি সাজা অমানবিক হওয়ায় সেসব বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। গ্রাম্য সালিশদার, মেম্বর বা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অমানবিক সাজা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে গতকাল টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে রহিম উল্লাহর (ফেনী-৩) প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে এ ব্যাপারে সরকার সচেতন রয়েছে এবং জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জেলা আদালত হতে আয় ১০৫ কোটি টাকা:
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের (ভোলা-৩) প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের জেলা জজ আদালতগুলো হতে মোট ১০৫ কোটি ৬৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৯ টাকা আয় হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (ডিসেম্বর-২০১৬ পর্যন্ত) এসব আদালত হতে ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪০ টাকা আয় হয়েছে বলেও তিনি জানান।
৩ বছরে ৪০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ টি মামলা নিষ্পত্তি :
সুবিদ আলী ভুঁইয়ার (কুমিল্লা-১) এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের (দ্বিতীয় মেয়াদ) পর হতে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের আদালতে ৪০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এসময় তিনি আরো জানান, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ২০১৬ সালের জুলাই হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২৯ হাজার ৮১৫ জনকে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে এক কোটি ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৭ টাকা আদায় করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রী আরও জানান, দেশের মামলা জট কমিয়ে আনতে অচিরেই সারাদেশে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল সৃজিত হবে এবং এ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। এছাড়া সাত বিভাগে সাতটি সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনাল, সাতটি সাইবার ট্রাইবুনাল, ১৯টি পরিবেশ আদালত ও ছয়টি পরিবেশ আপিল আদালত, ১১২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ২১৪টি সহকারী জজ আদালত, ৩৪৬টি মেট্রোপলিটন ম্যাসিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহায়ক পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
একটি যুগ্ম জেলা জজ আদালত সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া সরকার এরমধ্যে ২১২ জন সহকারী জজ/সমপর্যায়ের বিচারক নিয়োগ করেছে। ২০৭ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আরো ১১৫ জন নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় বিচারকার্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১৫টি চৌকি আদালত স্থাপন করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তর জেলাগুলোতে ১০ বছরের অধিক সময়ের পুরাতন ফৌজদারী মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মনিটরিং সেল মতবিনিময় সভার আয়োজন করছে এবং মামলাগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়ন করছে।