বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘সাংবাদিকতা হতে হবে পুরো সত্য, আংশিক নয়’। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। সকল ভয়-ভীতি ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে জাতির সামনে সত্য তুলে ধরতে হবে। যারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস রাখেন না, তাদের জন্য অন্তত সাংবাদিকতা নয়।
আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে রংপুর টাউন হলে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
রংপুর ছাড়াও দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, বগুড়ার সাংবাদিক এ সমাবেশে যোগ দেন।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.শহিদুল ইসলাম, ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, এরফানুল হক নাহিদ, মমতাজ শিরীন ভরসা, বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সল, পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, পুলিশ সুপার আবু সাইম, সাংবাদিক স্বপন চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর বিভাগের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ, জামিল আহমেদ ও নাহিদ হাসান খন্দকার, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক দিনাজপুরের জি এম হিরী, কুড়িগ্রামের তামজিদ হাসান, গাইবান্ধার সৈয়দ রোকনুজ্জামান, লালমনির হাটের বকুল রায়, নীলফামারীর ইয়াসিন মুহাম্মদ সিপু, ঠাকুরগাঁওর আল মাহমুদ ইমন, পঞ্চগড়ের মোশাররফ হোসেন, টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের এহসানুল হক সুমন, শরীফা শিউলি, আসাদুজ্জামান আফজাল প্রমুখ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকের লড়াকু মন, গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকতা আর গণতান্ত্রিক শাসন। কিন্তু এ তিনটিরই বড্ড অভাব রয়েছে। নানা কারণে সাংবাদিকরা এখন সাংবাদিকতাকে স্রেফ পেশা হিসেবে নিয়েছেন, মিশন বা ভিশন হিসেবে নয়। সাংবাদিকতা আসলে কেবল তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনার বিবরণ সংগ্রহের পেশা নয়; এটির ভিত্তি হচ্ছে তথ্য যাচাই করাও।
তিনি বলেন, দু’একটি বাদ দিলে গণমাধ্যম হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। তাই তারা সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করতে পারে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুরক্ষাও দিতে পারে না। বরং অধিকাংশ গণমাধ্যম মালিক রাজনীতি ও ব্যবসার ঢাল হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন। অনেকে যেনতেনভাবে একটা পত্রিকা বের করে সম্পাদক বনে যাচ্ছেন। ৫০ কপি পত্রিকা বের করে তা বগলে চেপে সচিবালয়ে ঢোকেন। এসব বগল সম্পাদককের দাপটে আসল সম্পাদকরা কোণঠাসা। বগল সম্পাদকরা তথ্য সন্ত্রাসকে পূঁজি করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিচ্ছে।
সাংবাদিক নেতা বলেন, রাজনীতিকরা, আমলারা এবং বিজ্ঞাপন দাতারা গণমাধ্যমকে তাদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়, কখনও কখনও এরা গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের জীবনও বিপন্ন করে তোলে। গত ১৫ বছরে ষাটের অধিক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন এসব কারণে। তাই গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকতা খুব দরকার। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে দু’একটি বাদ দিলে গণমাধ্যম হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। তাই তারা সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করতে পারে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুরক্ষাও দিতে পারে না। রাজনীতিকদের ক্রোধ আর চতুরতার এবং তাদের দুর্নীতি ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতার মর্যাদা সাহসের সঙ্গে বজায় রাখতে হবে প্রতিষ্ঠানকেই। সেই প্রাতিষ্ঠানিকতা এখন কি সত্যিই আছে?
ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত গণমাধ্যম। গণতন্ত্র, সুশাসন ও আইনের শাসনের নিরন্তর সহযোগী। কাজেই যে সরকারই আসুক সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ভালো সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি অপ-সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে হবে। গত ১৫ বছর দেশে সাংবাদিকতা বলে কিছুই ছিল না। সাংবাদিকরা যেন স্বস্তি নিয়ে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে সাংবাদিক ইউনিয়ন কাজ করছে।
এরফানুল হক নাহিদ বলেন,গণমাধ্যম অতীতের স্বৈরশাসকদের তোষামোদ করে চলেছে তাদের নিজস্ব স্বার্থে বা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ রক্ষার জন্য। এর ফলে, তারা নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি।