আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী বিজয় দিবসের আগে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবতাবিরোধী সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে এবং এর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। গতকাল শনিবার ঢাকার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এর দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের সব বিচার সম্পন্ন করে আমরা আগামী বিজয় দিবস পালন করব।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পাশাপাশি জুলাই বিদ্রোহের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। দায়িত্ব নেওয়ার পরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ কাজ না করায় আমাদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো প্রসিকিউটর ছিল না, আমাদের নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হয়েছে এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পুরো সিস্টেমটি পুনর্গঠন করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে দিনরাত কাজ করছি। আমাদের পুরো টিম সর্বোচ্চ ভালো কিছু করতে পুরোদমে কাজ করছে। আমি আশা করি আমরা আগামী বছরের মধ্যে বিচার বিভাগীয় প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধান এবং বিচার সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরপরাধ (তৎকালীন বিডিআর) জওয়ানদের কারাগার থেকে মুক্ত করতে কোনো বাধা নেই।’
সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংস্কার আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুরো আইন বাতিল করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। কেননা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংঘটিত ডিজিটাল অপরাধ বিষয়ে সারা বিশ্ব জানে এবং স্বীকার করে।’
তিনি আরও বলে, ‘এছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে হ্যাকিং, ডিজিটাল জালিয়াতি বা অর্থ পাচারের মতো ডিজিটাল অপরাধগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কিছু আইন-কানুন দরকার। তবে আইনের কিছু ধারায় সংস্কার আবশ্যক।’
ড, আসিফ নজরুল বলেন, ‘এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যখন পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। এই কারণেই আমরা এমন কঠিন সময় পার করছি। এই দেশে এর আগে কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বিচারিক প্রক্রিয়ার মান বজায় রাখতে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি, যাতে কেউ বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আঙুল তুলতে না পারে। যারা গণমানুষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অপরাধ করেছে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার করা হবে।’
প্রান্তিক মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন কি না জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি শীর্ষ অপরাধীদের ওপর। প্রধান লক্ষ্য অপরাধের মূল হোতাদের বিচারের সম্মুখীন করা। প্রান্তিক মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করা আমাদের পক্ষে কঠিন।’