পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবি আদায়ে চলতি বছরের শুরু থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের নতুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারী কর্মকর্তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও এজিএম (ওঅ্যান্ডএম) আব্দুল হাকিম এবং এজিএম (ওঅ্যান্ডএম) মো.সাহাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, এর আগে শতভাগ গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে বিভিন্ন দফায় ১৫ দিন কর্মবিরতি পালন করা হয়। যেহেতু উন্নত গ্রাহক সেবা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই আন্দোলন, সেহেতু গ্রাহক সেবা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হোক, এটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাম্য নয়।
কিন্তু গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে গ্রাহক এবং সরকারের মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৪ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার এবং কিছু কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে দপ্তরাদেশ জারি করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এর প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎসেবা বিঘ্নিত হয়। আমরা উক্ত বিষয়ের জন্য গ্রাহকদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।
বার্তায় আরও বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ১৭ অক্টোবরে মধ্যে মুক্তি, চাকরিচ্যুতির আদেশ বাতিলের স্পষ্ট আশ্বাস এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিনিধির সঙ্গে আগামী ২০ অক্টোবর আলোচনায় বসার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তার আহ্বানের প্রেক্ষিতে এবং জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।
বার্তায় বলা হয়, তবে সরকারের হস্তক্ষেপে বিষয়টির যৌক্তিক সমাধানের বাইরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে পুনরায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হয়ে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্রেক হলে তার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দায়ী থাকবে না।
এদিকে, সারাদেশের ৮০টি পিবিএস-এর ন্যায় আলমডাঙ্গায়ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি, শাটডাউন ও ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমল থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন বর্তমান সরকারের সময়ও অব্যাহত রয়েছে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। পরে আরইবি চেয়ারম্যান পরিবর্তনের পর নতুন চেয়ারম্যান পল্লী বিদ্যুৎসমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।
দাবিগুলোর মধ্যে ছিল দুটি প্রধান দাবি- ১। সকল অনিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ এবং ২। অভিন্ন সার্ভিস কোড প্রণয়ন। বিগত সরকারের পতনের পর নতুন সরকার এ বিষয়ে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আলমডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য আরইবি-এর কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তাদের ‘দালাল’ বলে প্রচার করছে।
গতকাল আলমডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মচারীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে এবং বেশিরভাগই তেমন কোনো কাজ করেননি। তাদের দাবি পূরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নিরাপত্তার জন্য আলমডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, বিকেলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সমাধানের আশ্বাস আসায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।