নিউজ ডেস্ক: অফিসের কোনো কাজ করবেন? বস বলে দিয়েছে যে স্যালারি শিটটা যেন পরের দিন অবশ্যই জমে দেওয়া হয়, নাতো পাশের টেবিলের রহিমা আপার সামনেই ঝাড়ি খেতে হবে (লজ্জার ব্যাপার)। কাজ করতে যেয়ে দেখেন যে DOC ফাইলটায় ডাবল ক্লিক করলে মান্ধাতার আমলের Wordpad দিয়ে খুলছে। কী সমস্যা? পুরনো ডিভিডি ঘেটে কয়েক মিনিট খরচ করে ইন্সটল করে নিলেন মাইক্রোসফট অফিস ২০১০। সাথে আপনার সোনামণির জন্যে মাইক্রোসফট এনকার্টা প্রিমিয়াম ইন্সটল করে নিবেন। তাহলে বেচে গেল আরো ২৪৫ ডলার।
উফফ! কী মুশকিল! এই বিদঘুটে জিনিস দিয়ে কেউ ইন্টারনেটে ঢোকে? ফায়ারফক্স, ক্রোম ইত্যাদি ফ্রী বলে সত্যিই আপনার কিছু সময় (সিরিয়াল নাম্বার খুঁজতে যা ব্যয় হত) বেচে গেল। সহজেই ফায়ারফক্স ইন্সটল করে নিলেন আর অগুণতি ট্যাব খুলে জিপির আলো ঘরে আনতে শুরু করে দিলেন। চাইলে বাঘের হুংকারও আনতে পারেন। থাক সেসব। কিন্তু ফাইল ডাউনলোড করার সময় ফায়ারফক্সের পিচ্চি উইন্ডোতে Downloading … দেখতে ভালো লাগছেনা। তাছাড়া ইউটিউবের ভিডিওগুলাও ডাউনলোড হচ্ছেনা। কোত্থেকে যেন আইডিএম এর সাইলেন্ট ইন্সটলার নামিয়ে রেখেছিলেন। আজ ওটা কাজে লেগে গেল। ইন্টারনেট ব্রাউজিংএ এখন ২৫ ডলার ছাড়!
অমুক ড্রাইভটা ভর্তি হয়ে গেছে তাইনা? কিংবা ডাউনলোড করে মুভিগুলা আপনার হার্ডডিস্কে “ডাটাসংখা বিস্ফোরণ” ঘটাচ্ছে। চিন্তা নেই। ১০৳ দিয়ে ডিভিডি কিনলেই ৪.৩জিবি ডাটা রাইট করা সম্ভব। কিন্তু উইন্ডোজের Send to DVD-R/RW দিয়ে তো চলবেনা। ইন্সটল করে নিবেন নিরো স্যুট (ভাবই আলাদা)। যদি পিসি কেনার সময় ডিভিডি রমের সাথে পাওয়া নিরোর ডিস্ক টা থাকে তাহলে বাচলেন। নাতো খরচ হত ১০০ ডলার।
যারা গ্রাফিক্সের কাজ করেন তাদের তো লাগবে অ্যাডোব ফটোশপ, ফ্ল্যাশ, প্রিমিয়ার। থাক, কষ্ট করে ৫০টাকা দিয়ে অ্যাডোব সিএস ৫.৫ কিনে নেন। খামোখা ডলার দিয়ে কিনে কী লাভ? আর যারা ডিজাইন করবেন, তারাও কষ্ট করে দোকানে যেয়ে অটোক্যাড বা মায়া যেটাই হোক কিনে নিবেন। বাচল আরো ২৫৯৯ ডলার।
আর ছবি দেখবেন কী দিয়ে? কেউ কেউ ACDSee বা অন্য কোনো সফটওয়্যার ছাড়া ছবি দেখতে অস্বস্তিবোধ করেন। তাদের জন্য ৭০ ডলার মাফ।
পছন্দের ভিডিও মোবাইলে নিবেন? ডিভিডি রিপ করে পিসি তে রাখবেন? কি যেন নাম একটা, XiliSoft বা iSkysoft এর জট্টিল দেখতে ভিডিও কনভার্টারটা আপনার চাই। ডি, ই বা এফ ড্রাইভ খুজলেই পেয়ে যাবেন। কথা না বাড়িয়ে ঝটপট ইন্সটল করে নিন। এখন মোবাইলে “শিলা কী জাওয়ানি”র ভিডিও দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। ভাগ্যিস ৬০ ডলার দিয়ে না কিনে নিউমার্কেট থেকে সফটওয়্যার ডিভিডিটা কিনে রেখেছিলেন।
রুমমেটের সাথে ল্যান কানেকশান করেছেন? পাশের রুমেই কারা যেন ল্যানে দিব্যি চ্যাট করছে, ভিডিও শেয়ার করছে, রিমোট ডিসপ্লে ব্যাবহার করছে। বন্ধুর কাছ থেকে পেনড্রাইভ টা চেয়ে নিলেন। তারপর তাদের কাছে থেকে কয়েক সেকেন্ডেই কপি করে নিলেন সেই সফটওয়্যার। তারপর নিজের রুমে এসে ইন্সটল করে নিলেন সফটওয়্যারটা। নাম হয়ত TeamViewer. ভালোই করেছেন। ১৫০০ ডলার দিয়ে এই জিনিস কেনার মানে হয়না।
সেমিস্টার শেষের দিকে। অথচ প্রোগ্রামিং কমপ্লিট হয়নি। হন্যে হয়ে ছুটলেন এর ওর কাছে। নিয়ে এলেন Microsoft Visual C++. স্যারেরা বলে দিয়েছে যে এটাই ব্যাবহার করতে হবে। তাই কী আর করা। ফ্রীতেই তো পাচ্ছেন। কোড লিখুন আর Compile > Build > Run. আবারো ৮০০ ডলার ছাড়!
অ্যান্টিভাইরাসে কথা বলিনি তাইনা? তাহলে তো বিশাল ভুল করে ফেলেছি। আপনার প্রিয় বন্ধুর পিসিতে কী সুন্দর ক্যাস্পারস্কাই এর ‘কে’ টা ঝলমল করে। কিংবা নরটন কী সুন্দর রাডারের মত স্ক্যান করে। শুধু তাই নয়, ইউএসবি তে কিছু লাগালে অটো স্ক্যান করে ফেলে। ভাইরাস ঢুকবে তা তো দুরের কথা, উঁকি মেরেও দেখতে পাবেনা। সাইজ তো খুব বেশিনা। ওটাও কপি পেস্ট ইন্সটল। ওহ! শান্তি! ভাইরাস নিয়ে ভাবনা, আর না আর না। ভাবনা তাদের যাদের ৭০ ডলারের প্রোডাক্ট আপনি চুরি করে নিলেন।
সিস্টেম ক্লিন রাখা নিয়ে কিছু বলার দরকার নাই হয়ত। আমার চেয়ে আপনারাই বেশি জানেন কী দিয়ে কী হয়। Registry Mechanic তো ইন্সটল করা আছে তাইনা? তাইতো বলি খালি রেজিস্ট্রি ডিফ্র্যাগ মারেন কী দিয়ে? আরো কি যেন আছে, Advanced System Care (আপনার কোর আই প্রসেসর না থাকলেও টার্বো বুস্ট দিবেই দিবে ? ), Windows 7 Tweaker, PC Tools Registry Cleaner – বাকিগুলা বলে ফেলুন। তাহলে খুব খুশি তো? সিস্টেম ক্লিনের সাথে সাথে মাথাটাও ক্লিন থাকছে। হুদাই ওই সফটওয়্যার কোম্পানিকে ৪৩ ডলার না দিয়েই মজা লুটে নিচ্ছেন।
বিদেশ থেকে ছোট খালা অনেকগুলা ছবি পাঠিয়েছে। কিন্তু RAR TAR 7z কী কী সব ফরম্যাটের ফাইল। ধূর! ৫০টাকা দিয়ে উইন্ডোজ এর ডিভিডি কিনলাম, আর তাতে RAR ফাইল খোলা যায়না? রাগে গজ গজ করতে খুজে নিবেন WinRAR. যে ফোল্ডারে সফটওয়্যার ছিল তাতে serial.txt নামে আরেকটা ফাইল আছে, ওটায় কি সুন্দর করে সিরিয়াল নাম্বার লিখা আছে। ভাগ্যিস Ctrl+C তে কপি আর Ctrl+V তে পেস্ট করার ব্যাবস্থা আছে। নাতো আপনাকে কষ্ট করে সিরিয়াল টা দেখে দেখে ইনপুট করতে হত। কমান্ডের কল্যাণে আপনাকে ২৯ ডলার তো খরচ করতে হলই না, বরং ভালয় ভালয় ইন্সটল করে ফেললেন এই চিজ। বোনাস হিসেবে না হয় কনটেক্সট মেনুতে “Add to …” “Extract to …” লিখা একগাদা আইটেম পেয়ে গেলেন।
জি ড্রাইভটা খুব ঝামেলা করছে? আজকাল দোকানওয়ালারা খুব দুষ্টু হয়েছে। ১ টেরাবাইট হার্ডডিস্ক কিনেছেন, কিন্তু বেয়াদপটা সি ড্রাইভে ৩০ গিগা দিয়ে বাকি জায়গা দিয়ে ২২৫ গিগার ৪টা ড্রাইভ বানিয়ে দিয়েছে। সহ্য হয়? টাকা দিয়ে জিনিস কিনলেন, আর এরকম ব্যাবহার? যাই হোক, ওকে বলে লাভ নেই। নিজেই কাজে নেমে পড়েন। Partition Manager আছেনা? হ্যা, ইন্সটল দিন তো! কয়েক ঘন্টার মাঝেই কাজ কমপ্লিট। এখন কী সুন্দর ১০০গিগার ৯টা ড্রাইভ শোভা পাচ্ছে। একটার নাম Softwares, আরেকটা Games, Music, Natokz. ভাগ্যস দোকানদার কে ঠিক করতে দেন নি। নাতো দুই একশ টাকা চাইত। আর সফটওয়্যারটা তো ফ্রিতেই পেয়ে গেলেন। আরো ৪০ ডলার বাচানোর খুশিতে একটা পার্টি দিতে পারেন।
কবেকার সেই পুরানো একটা গেম ইন্সটল দিলেন। কিন্তু ফেলে দেওয়ার সময় বাধল বিপত্তি। আনইন্সটল করতে গেলেই বলে যে Installation log not found. মহা ঝামেলা! এবার তো এক্সপি সেটআপ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আপনার বন্ধুটি আপনাকে বাচাল। খোঁজ পেলেন Revo Uninstaller এর। বাহ! ক্লিক করতেই রেজিস্ট্রি থেকে গেমের সব ডাটা মুছে আপনাকে খুশি করে দিল। আনন্দে আপনি বন্ধুটিকে দুইটা সিঙ্গাড়া খাওয়ালেন। কিন্তু যারা কষ্ট করে সফটওয়্যারটি বানিয়েছে তারা তাদের প্রাপ্য ৪০ ডলার তো দুরের কথা, এক গ্লাস পানিও পেলনা।
কে যেন আপনাকে বলল যে উইন্ডোজ এর মাঝেই বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম চালানো যায়। আরে বাহ! এরকম উপায় আছে তাহলে! কষ্ট করে পাইরেট বে তে পেয়ে গেলেন VMWare. ইন্সটল করে মুখ থেকে বের হয়ে এল “ওয়াও!” ৩/৪ ঘন্টা ধরে ডাউনলোড করাটা তাহলে কাজে লাগলো। ইন্টারনেট এর বিলটাই তো দিতে হল, ওই সফটওয়্যার এর কোম্পানি তো আপনাকে ধরে তাদের প্রাপ্য ১৮৯ ডলার চাচ্ছেনা!
অনেক তো বকবক করলাম। ভিজুয়াল স্টাইল নিয়ে কিছু না বললে এই টিউন সবাই ডিসলাইক দিবে (যদিও এখন সেই সুযোগ নেই, তবে লাইক কম পড়লে খারাপ লাগে)। Windows Blinds এর নাম শোনেননি এমন মানুষ কম আছেন। টাস্কবার, আইকন, ফোল্ডার ব্যাকগ্রাউন্ড কী সুন্দর করে চেঞ্জ করে দেয়! আর ওইযে ObjectDock আছে। মাউস দিয়ে গুতা দিলেই আইকনগুলা রেগে যেন ফুলে যায়। এই দুইখান জিনিসের দাম ৪০ ডলার। ভয় লাগছেনা তাইনা? হ্যা, কারণ একটু খুঁজলেই ক্র্যাক সহ পেয়ে যাবেন। পারলে WinStep Extreme ও খুঁজতে পারেন। আর মনোমুগ্ধকর কার্সর যেটার নিচে তারা, আগুন ইত্যাদি জ্বলে সেটা CursorFX, এসব মোট ৪৯ ডলারের বদলে একেবারেই ফ্রীতে মিডিয়াআগুনে খুঁজলেই পাবেন।
তাহলে উক্ত সবগুলার মুল্য যোগ করলে হয় ৬৩১১ ডলার। ডলারপ্রতি ৭৫টাকা ধরলে ৪,৭৩,৩২৫ টাকা!!! আর স্ক্রীনশট নিতে SnagIt যার দাম ৫০ ডলার সেটার কথা নাইবা বললাম। HDTune ৩৩ ডলার, Tuneup Utilities ৩৫ ডলার ইত্যাদি তো আছেই।