নিউজ ডেস্ক:
জলি ও রিয়াজ তাদের সন্তানকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরেছে সবেমাত্র চার দিন। সন্তানের বয়স এক সপ্তাহ।
কিন্তু বাসায় আসার পর এই চার দিনে জলিকে বড্ড অচেনা লাগছে রিয়াজের। মাঝে মাঝেই কান্না করে উঠছে। জিজ্ঞেস করলে ভালো করে কিছু বলেও না। যে সন্তানকে দেখার জন্য গর্ভকালীন সময়ে অস্থির থাকতো জলি, সেই সন্তানকে দেখেতো তার আনন্দে সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকার কথা। তাহলে হঠাৎ হঠাৎ এমন করছে কেন সে? কিছুতেই মাথায় আসছে না রিয়াজের।
দাম্পত্যে পূর্ণতা আনে সন্তান। তাই প্রত্যেক বিবাহিত দম্পতিই চায় তাদের সন্তান পৃথিবীতে আসুক। স্বামী হিসেবে আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। কিন্তু আপনার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে মাতৃত্বের এই জার্নিটা পাড়ি দিতে কতখানি শারীরিক ও মানসিক ধকলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, আপনি কি তা অনুভব করতে পেরেছেন?
বাইরের দেশে কিছুটা স্বামীকে বোঝানোর জন্য লেবার রুমে স্ত্রীর মাথার কাছে স্বামীকে রাখা হয়। আমাদের দেশে সে সুযোগ নেই। সন্তান গর্ভে থাকার সময় একরকম কষ্ট, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় একরকম, আবার জন্মানোর পর থেকে তাকে বড় করা আরেক রকম কষ্ট। আপনার স্ত্রীকে অনেকগুলো স্টেজের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে আপনি পারবেন প্রত্যেকটি স্টেজেই আপনার স্ত্রীর পাশে থাকতে। চলুন সন্তান জন্মানোর পর কীভাবে স্ত্রীর পাশে আপনি থাকতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
* স্ত্রী পোস্ট-পারটাম ডিপ্রেশনে ভুগছে কিনা খেয়াল রাখুন : গবেষকদের মতে, প্রসবপরবর্তী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রসূতি পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশনে ভোগেন। নতুন মায়ের অকারণেই মন খারাপ হয়ে যায়। অস্থিরতা বোধ করেন। সবকিছু এলোমেলো লাগে, কান্না পায়। প্রসবের পরে নারীর হরমোনের তারতম্য, মানসিক চাপ, দায়িত্ববোধ সব মিলিয়ে নারীর- এই সমস্যা তৈরি হয় বলে বিশেষজ্ঞের ধারণা। পরিবারের, বিশেষ করে স্বামীর দায়িত্ব হচ্ছে এ সময় স্ত্রীর পাশে থেকে তাকে সাহস, সমর্থন জোগানো।
* আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন : আপনি আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসেন। কিন্তু নিজের চাপা স্বভাবের কারণে হয়তো সে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন না। আপনাকে বলছি, এবার সময় এসেছে আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করার। এই সময় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে নতুন মা খুব নাজুক সময় পার করেন। তাই আপনার স্ত্রীর মানসিক অস্থিরতা দূর করতে এখন আপনার ভালোবাসার প্রকাশ খুবই প্রয়োজন।
* স্ত্রীকে সময় দিন : যেটুকু অবসর পান স্ত্রীকে সেই সময়টুকুই দেন ওই মুহূর্তে। একসঙ্গে টিভি বা কোনো মুভি দেখুন। সন্ধ্যায় বাসায় থাকলে চা বা কফি পান করুন দুজন মিলে। গল্প করুন। মোট কথা, বুঝিয়ে দেন আপনি তার পাশে আছেন।
* কাজে সহযোগিতা করুন : সন্তানের জন্মের পর মাকে সারাক্ষণ সন্তানের দেখভালে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়। আপনি এই কাজে সাধ্যমতো চেষ্টা করুন স্ত্রীকে সাহায্য করার। বাচ্চার সঙ্গে খেলা, তার ন্যাপি বদলানো- এইরকম কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করুন।
* রাগ বা অবহেলা করবেন না : যেকোনো কারণে আপনার রাগ বা অভিমান হতেই পারে। কিন্তু রাগের বশে ওই সময়টায় স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। কিংবা এমন কিছু করবেন না, যার জন্য আপনার স্ত্রীর মনে হতে পারে আপনি তাকে অবহেলা করছেন।
সন্তান হল, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝের সেতু স্বরূপ। আর সেই সেতুটা অটুট থাকে একে অপরের পাশে বন্ধুর মতো থাকার মধ্য দিয়ে। তাই সঙ্গীর পাশে থাকুন সময়ে-অসময়ে।