দাওয়াত শব্দটি আরবি। এর অর্থ ডাকা, আহ্বান করা। ইসলামের পরিভাষায় পথহারা মানুষকে দ্বীনের দিকে আসার আহ্বান জানানোকে দাওয়াত বলা হয়। আল্লাহ মানুষকে চির শান্তির আলোয় দারুস সালামের প্রতি দাওয়াত দেন, আহ্বান করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ মানুষকে দারুস সালাম তথা শান্তি-নিরাপত্তার আবাসের দিকে আহ্বান করেন…। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৫)
আল্লাহর এ দাওয়াত বা আহ্বান মানুষের কাছে পৌঁছে নবীদের মাধ্যমে। যাঁরা দাওয়াত দেন, আরবিতে তাঁদের দাঈ বলা হয়। যুগে যুগে সব নবী এ দাওয়াতের কাজ করেছেন। মহানবী (সা.)-কেও আল্লাহ দাঈরূপে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৬)
নবুয়তের ধারাবাহিকতা পূর্ণতা লাভ করে মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে। মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ওফাতের পর দাওয়াতের এ গুরুদায়িত্ব উম্মতের ওপর অর্পিত হয়। এটি কিয়ামত পর্যন্ত আগত মহানবী (সা.)-এর উম্মতের দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক যেন থাকে, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সত্ কাজের আদেশ দেবে এবং অসত্ কাজে বাধা দেবে। আর এরাই হলো সফলকাম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। গোটা মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সত্ কাজের আদেশ দাও এবং অসত্ কাজে বাধা দাও আর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)
সত্য ও শান্তির পথে এই দাওয়াতি কার্যক্রমের কর্মপন্থা কী হবে—এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি আপনার রবের দিকে আহ্বান করুন হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা, সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে উত্কৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)
কোরআনুল কারিমে বারবার বলা হয়েছে যে প্রচার বা পৌঁছানোই নবী-রাসুলদের একমাত্র দায়িত্ব। ইরশাদ হয়েছে : ‘রাসুলদের দায়িত্ব শুধু সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৫)
যুগে যুগে নবীরা মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। নুহ (আ.)-এর জবানিতে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি আমার রবের রিসালাতের দায়িত্ব তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি এবং আমি তোমাদের নসিহত করছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬২)
সত্য কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, প্রচার, নসিহত, ওয়াজ বা আল্লাহর দ্বিন পালনের পথে আহ্বান করাই ছিল সব নবী ও রাসুলের দায়িত্ব। সব নবী তাঁর উম্মতকে তাওহিদ ও ইবাদতের আদেশ করেছেন। শিরক, কুফর ও পাপকাজ থেকে নিষেধ করেছেন। উম্মতে মুহাম্মদী সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি নবীর, যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইনজিলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদের সত্ কাজের নির্দেশ দেন এবং অসত্ কাজ থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)