নিউজ ডেস্ক:
সংসার পাতা হলো না প্রবাসী মোহাম্মদ আসলামের (৫২)। নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে মূলধারার একটি বিজ্ঞাপণী সংস্থায় কাজ করেন। ব্যাচেলর জীবন ছেড়ে সংসারী হতে চেয়েছিলেন। প্রথমে ১৯৯৬ এবং দ্বিতীয় বার ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে গিয়ে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বপ্ন ছিল স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার। কিন্তু তা চুরমার হয়ে গেছে।
উভয় স্ত্রীই মোটা অংকের স্বর্ণালংকারসহ নগদ অর্থ নিয়ে ছিটকে পড়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি। ২০১৫ সালে এক প্রবাসীর মধ্যস্থতায় খুলনার আয়শা বেগম নীলা নামক এক নারীকে বিয়ে করেন। তার ২০ বছর বয়সী এক পুত্রও রয়েছে। উভয়কে আমেরিকায় নিতে রাজি হয়েছিলেন। নতুন করে স্বপ্ন দেখার মধ্যেই ঢাকার রায়ের বাজারে একটি এপার্টমেন্ট ভাড়া করেন স্ত্রীর জন্যে।
গত দু’বছরে অন্তত চার বার বাংলাদেশে যান আসলাম। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল। গত বছরের ১৯ অক্টোবর ঢাকাস্থ মার্কিন কন্স্যুলেটে স্ত্রী-পুত্রের ইন্টারভিউ হয়। এরপর আরও কিছু ডক্যুমেন্টের প্রয়োজনে তা ঝুলে ছিল। এমনি অবস্থায় নীলা ব্যবসার নামে ২০ লাখ টাকা চান।
আসলাম তাকে জানান, ব্যবসার প্রয়োজন নেই। আমি কন্স্যুলেটের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র সাবমিট করলেই ভিসা ইস্যু করবে। নিউইয়র্কে গেলেই সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে। সে অনুযায়ী, গত ৯ জানুয়ারি সকালে ঢাকায় পৌঁছান আসলাম। রাত ১১টায় রায়েরবাজারের ওই বাসায় উঠার পরই সবকিছু উলট-পালট মনে হয়।
লাগেজের তালা ভাঙ্গা, নগদ ১০ হাজার ডলারের দুটি বান্ডিল নেই। লাপাত্তা হয়ে যায় আরও কিছু দরকারি জিনিস। ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলে নীলাই। আসলাম ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাকে ছোট্ট একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকালে নীলার আত্মীয়-স্বজনরা এসে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন।
আসলাম গত সপ্তাহে এ প্রতিনিধিকে আরও জানান, ‘টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওরা পুলিশ ডাকার হুমকি দেয়। হাজারিবাগ থানার দুই অফিসার এসে উল্টো আমাকেই অভিযুক্ত করে যে, আমি নাকি মদ পান করেছি। আমার কাছে নাকি হেরোইন আছে ইত্যাদি।
আসলাম উল্লেখ করেন, ‘এর আগের দিনই ওরা আমার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে রেখেছিল। পুলিশকে আমি পাসপোর্ট প্রদর্শন করে জানাই যে, ঢাকায় এলাম গতরাতে। তাহলে কীভাবে সাত দিন যাবত আমি মদ আর হেরোইনে আসক্ত হয়ে রয়েছি। ঘণ্টা দুয়েক পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বোধোদয় ঘটে। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি কেন ওদের খপ্পরে পড়েছি।
আসলাম বলেন, অবশেষে আমি রাত ১০টায় পুলিশের সামনেই কাজী ডেকে তালাক দিতে বাধ্য হই এই নীলাকেও। বিয়ের সময় তাকে ১২ ভরি স্বর্ণও দিয়েছিলাম। দেনমোহরের তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছি বিয়ের সময়েই। সবকিছুর দাবি ছেড়ে দিয়ে থানা থেকে পুলিশের সহায়তায় পান্থপথে এসে চট্টগ্রামের কোচে উঠে পড়ি। ওরা সে সময় আমাকে তিন হাজার টাকা দেয় চট্টগ্রামে যাবার জন্যে।
মো. আসলাম ব্যক্তিগতভাবে ধর্মভীরু। তার দাবি, জ্ঞানত কোনো অন্যায়-অপকর্মে জড়িত হননি। এতদসত্বেও কেন বারবার এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন তা বুঝতে পারছেন না আসলাম।