ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকূপার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বাসায় ১৭ দিন তালা বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বরারব ঘটনার বিচার চেয়ে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.মনিরুল ইসলাম। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.আফজাল হোসেন। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্য দায়িত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে। উপাচার্যের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, সহকারী অধ্যাপক মনিরুল ইসলামের বাসায় গত চার বছর ধরে ৯/১০ বছরের বয়সী রিমা নামের একটি মেয়ে বসবাস করে আসছিল। মেয়েটির খানিকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মেয়েটির বাবা জমির হোসেন, তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় কাঁচেরকোল গ্রামে। জমির হোসেন দরিদ্র হওয়ায় মেয়েটিকে ওই শিক্ষকের বাসায় রেখেছিলেন। ওই বাসা থেকেই মেয়েটি গত ১৯ নভেম্বর হঠাৎ হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই দিনই (১৯ নভেম্বর) শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১২০০) করেন সহকারী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম। এছাড়া, মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি মাইকিং, পোস্টারিং ও কয়েকটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও দেন। কিন্তু ওই মেয়ের কোনও সন্ধান তিনি পাননি। অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, গত ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের মাধ্যমে মনিরুল জানতে পারেন যে, মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম বিভাগের অধ্যাপক আফজাল হোসেনের বাসায় আছে। এসময় ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ এস এম রেজাউল করিমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মেয়েটিকে আনতে যান অধ্যাপক আফজালের বাসায়। কিন্তু ওই বাসায় গিয়ে বারবার কলিং বেল চাপলেও বাসার দরজা খোলেনি। অধ্যাপক আফজাল হোসেন ও তার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন বলে ওই সময় জানান তাদের বড় মেয়ে মিমি। তবে শেষ পর্যন্ত বাসায় ঢুকে ওই মেয়েকে নিয়ে আসতে সক্ষম হন মনিরুল ইসলাম। জোরপূর্বক মেয়েটির মাথা কামিয়ে দেওয়া হয় এবং ১৭ দিন ধরে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় বলেরও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গাতেই মাইকিং করেছি, পোস্টারিং করেছি। তবুও মেয়েটিকে খুঁজে পাইনি। তারা কি এর কিছুই দেখেননি বা শোনেননি? এ থেকেই তো স্পষ্ট বোঝা যায় যে মেয়েটি তারা জোরপূর্বক আটকে রেখেছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো.আফজাল হোসেনের স্ত্রী বলেন, আমাদের গাড়ির ড্রাইভার মেয়েটিকে গেট থেকে নিয়ে এসেছিল। মেয়েটি কোথায় থাকত, তা বলতে পারেনি আমাদের। তবে সে বলেছিল, তার বাড়ি কাঁচেরকোল গ্রামে। আমার বাবার বাড়িও ওই গ্রামেই। তাই মেয়েটিকে আমাদের বাসাতেই রেখেছিলাম। মেয়েটি ঢাকায় কোথায় থাকতো এবং তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানার বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছিল বলে দাবি করেন তিনি। মেয়েটির মাথা কামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে ড.আফজালের স্ত্রী বলেন, মেয়েটির মাথায় উকুন হয়েছিল। এজন্য তাকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আফজালের স্ত্রী বলেন, আমরা কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেখিনি। আমরা ব্যস্ত ছিলাম। এতো খবর রাখার সময় নাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।