স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী শৈলকুপা প্রেসক্লাবের তহবিল তসরুপের অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছরে ক্লাবের অনুদানের প্রায় ৫ লাখ টাকা গায়েব করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিজয় মেলা থেকে অর্জিত আরো ৪ লাখ টাকার কোন হিসাব নেই। দীর্ঘ কয়েক বছর পরিশ্রম করে স্থানীয় সাংবাদিকরা ক্লাবের নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এক তলা ভবনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে গত ২ বছরে।
তবে অভিযোগ উঠেছে কবিরপুরে ক্লাবের নিজস্ব ভবনের নামে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ টাকা অনুদান নেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দানশীল ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের কাছ থেকে। এসব টাকা ক্লাবের ব্যাংক একাউন্টে যথাযথ ভাবে রাখা হয়নি। ক্লাবের একাউন্টে মাত্র ১ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। বাকী সবটাকা পকেটস্থ করা হয়েছে। বর্তমান কমিটির কয়েকজন এসব টাকা ভাগবাটোয়ারা করে পকেটে তুলেছে।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, প্রিয়াঙ্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি সাইদুর রহমান সজল ১ লাখ টাকা ক্লাবের ভবন উন্নয়নে দিয়েছেন। বিশ্বাস বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান দুলাল বিশ্বাস কয়েক দফা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন, যার পরিমাণ লক্ষাধিক টাকা। ওয়াসা’র সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এভাবে বিভিন্ন মানুষ, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্লাবের নামে অর্থ নেয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আব্দুল হাই জেলা পরিষদের মাধ্যমে সরকারী বরাদ্দ দিয়েছেন।
শৈলকুপা পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম ক্লাবের ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দিয়েছেন। শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনার ছেলে শিকদার ওয়াহেদুজ্জামান ইকু ভবন নির্মাণে ব্যক্তি উদ্যোগে ৩০ ব্যাগ সিমেন্ট দিয়েছেন। শৈলকুপা পিআইও অফিস প্রায় ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষে ড. বাবর আলী প্রায় ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অনুদান দিয়েছে শৈলকুপা কৃষি অফিসও। এভাবে লাখ লাখ টাকার অনুদান এসেছে ক্লাবটিতে।
শৈলকুপা প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক মাসুদুর রহমান জানান, ক্লাবের সভাপতি এম হাসান মুসা, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সহ নির্বাহী কমিটির কয়েক সদস্য এসব টাকার কোন হিসাব রাখেননি। এসব অনুদান অর্থের সবটাই প্রায় লোপাট হয়েছে। তিনি জানান, শৈলকুপা প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণে বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়, সেখান থেকে ৪ লক্ষাধিক টাকা আয় হলেও এক টাকারও হিসাব ক্লাবে দেয়া হয়নি। সে টাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্টেও রাখা হয়নি। এমনভাবে আয়-ব্যয়ের কোন কাগজ সংরক্ষণ করা হয়নি। তিনি বলেন, এসব কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত এক বছরে প্রেস ক্লাবের অনেক সদস্যকে ইচ্ছামতো বাদ দেয়া হয়েছে। আবার যারা সাংবাদিকতায় জড়িত নয় এমন অনেককে সদস্য করা হয়েছে, পদ-পদবী টিকিয়ে রাখার জন্য। ক্লাবটিকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, এতে প্রকৃত সংবাদকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কমিটির মেয়াদ শেষের পথে হওয়ায় দাবি উঠেছে ক্লাবের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়ে তারপর নতুন করে ভবনের বাকী কাজ শুরু করার। আয়-ব্যয় সঠিক না থাকলে তা লুট-পাটের খাতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন শৈলকুপার সাংবাদিকরা।
তবে প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাসান মুসা বলেছেন, প্রেসক্লাবের উন্নয়নে নিয়মের মধ্যেই হিসেব রেখে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। সামনে প্রেসক্লাব নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল অপপ্রচারে নেমেছে।