নিউজ ডেস্ক:
ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারী শুল্ক, ব্যবসার ওপর ঢালাও ১৫ % ভ্যাট বাড়ানো ও সঞ্চয় পত্রের সুদ কমানোর প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সরকারি দলের সদস্যরা।
তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী, আপনার কাজ বাজেট পেশ করা। আপনি করেছেন। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন (বাজেটে) জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, থাকবে না। জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করেন। ঢালাওভাবে ভ্যাট বিশ্বে কোথাও নেই।
এমপিদের দাবি অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেট থেকে এসব জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাব প্রত্যাহার না করলে ফ্লোর ক্রসিংয়ের জন্য সংবিধান সংশোধনেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে তীব্র সমালোচনা ও বিরোধীতার মুখে অধিবেশন কক্ষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এসময় তাকে বয়স জনিত কারণে কম কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বাজেটে ঢালাওভাবে ভ্যাট বাড়ানো বিরোধীতা করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে তেল, গ্যাসের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন। ফলে সরকার এসবের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। এতে শুধু বিদ্যুৎ বিলই বাড়বে ৭ শতাংশ। এটা করলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। তিনি তেল- গ্যাসের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান। ব্যাংক আমানতের ওপর অতিরিক্ত আবগারী শুল্ক আরোপ ও ঢালাওভাবে ভ্যাট ধার্যের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘নির্বাচন বিরোধী’ বাজেট বলেও অভিহিত করেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ঘোষণাকে বণ্বে ব্যাংকের পরামর্শ হিসেবে চিহ্নিত করে এ বিষয়েও প্রবল আপত্তি জানান তারা।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার শুরুতেই সরকার দলের প্রভাবশালী সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন ভালোকথা। কিন্ত জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করেন। আপনার কিছু কথা বার্তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনি কম কথা বলেন। বয়স হয়ে গেছে কখন কি বলে ফেলেন। তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, রিজার্ভসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি আমল থেকে অনেক অনেক বেশি। খালেদা জিয়া আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তার এবং তার সন্তানের দুর্নীতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচক এখন উর্ধ্বমুখী। আওয়ামী লীগ হাওয়া ভবন বা খোয়াব ভবন বানিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট করে না। লুটপাট করলে দেশ নিম্ন মধ্যম আয়ে পৌঁছতে পারতো না। তারা হাওয়া ভবন বানিয়ে দুর্নীতির আখড়া খুলেছিল।
আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় রাখার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন জানা নেই। হল-মার্কের চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারা দেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন। ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সরকারি দলের এই এমপি বলেন, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেছেন গণহারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট আহরণের নজির নেই। ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংককে একহাজার কোটি টাকা মূলধন দেয়া হচ্ছে। কার টাকা কেন দিচ্ছেন? তারা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে আমাদের? তিনি বলেন, সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেয়া যাবে না। এসময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও আদালতের সরকারি কৌসুঁলিদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেন। ঋণ খেলাপিদের বিশাল লিস্ট দিছেন। কই তাদেরতো ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটার প্রতিবাদ করছি। তিনি বলেন, সামনে আমাদের নির্বাচন আসছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করে দিলে ভোট আসবে না। আগামী নির্বাচনে আল্লাাহ তাকে (অর্থমন্ত্রী) সুযোগ দেবে কীনা জানি না। কিন্তু যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে তারা যাতে নির্বাচন করতে পারে সেটা খেয়াল করতে হবে। মানুষকে যদি বিভ্রান্ত করে দেই তাহলে সমস্যা হবে। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটা কমানো ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ।
সময় তিনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উদ্দেশে বলেন, বিদ্যুতের উন্নতি হয়েছে ঠিকই, অনেক লাইন হয়েছে। কিন্তু রমজানের সময়, সেহরির সময় বিদ্যুৎ নেই। ১৪-১৫ বার যদি বিদ্যুৎ যায় তাহলে এনিয়ে আর কি বলার থাকতে পারে। এগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিন। পাশে বসে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁনের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, এই যে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, শিশু ধর্ষণযেভাবে হচ্ছে… এগুলো বন্ধে জোরালোভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশ উন্নত হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। মানুষ নিশ্চিতে ঘুমাতে পারে না।
মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম সংবিধানের আর্টিকেল ৭০ এর সংশোধনের দাবি জানিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী এনে বাজেটের বিরুদ্ধে এমপিদের ভোট দেবার ব্যবস্থা করেন, তাহলে দেখবেন, অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আর অনড় অবস্থানে থাকতে পারবেন না। আমাদের কথারও মূল্যায়ন হবে।
বাজেট আলোচনায় আরো অংশ নেন অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, সংসদীয় কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, এইচ এন আশিকুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, মাহবুব আলী, মোসলেম উদ্দিন, নরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ইসরাফিল আলম, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না, সেলিম উদ্দিন, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ ও বিএনএফ’র এস এম আবুল কালাম আজাদ।