বিষধর সাপ ধরতে গিয়ে সাপুড়ে মো. মনির (৩০) কামড়ের শিকার হন। শেষ পর্যন্ত ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানেও বিপত্তি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় অ্যান্টিভেনম নেই। হাসপাতালের বারান্দায় কাতরানোর খবর যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কানে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে পড়লেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সহযোগিতা নিয়ে সাপুরে মনিরের পাশে দাঁড়ায়।
গত সোমবার গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এ চিত্র দেখা যায়। তবে তখনো বিপত্তি কাটেনি। চুয়াডাঙ্গা শহরের দুটি ফার্মেসি সাপে কামড়ের অ্যান্টিভেনম রাখে। তবে একটিতে নেই, আরেকটি বন্ধ। যোগাযোগ করে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করে বাসা থেকে দোকানদারকে নিয়ে আসে ছাত্ররা। অ্যান্টিভেনম কিনে সাপুড়ের পাশে দাঁড়ায় শিক্ষার্থীরা। ১০টি অ্যান্টিভেনমের এক ডোজ দেয়া হলেও চিকিৎসক জানান, আইসিইউ সাপোর্ট ও সমপরিমাণ আরেক ডোজ অ্যান্টিভেনম দেয়া লাগবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীরাই রাত ১২টার দিকে তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
সাপুড়ে মনিরের স্ত্রী জামেলা বেগম বলেন, ‘সাপে কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় স্থানীদের সাহায্যে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগীর শরীরে বিষের প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম দিতে বলেন। হাসপাতালে সাপ্লাই ছিল না, বাইরে থেকে কিনতে গেলে ১৪ হাজার টাকা দাম। টাকা না থাকায় আমি নিরুপায় হয়ে পড়ি। কিছু ছাত্র এসে সাহায্য করে।’
শিক্ষার্থী সাফ্ফাতুল ইসলাম বলেন, ‘মুমূর্ষু সাপুড়ের সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম না পেয়ে কাতরানোর কথা শুনে আমরা খোঁজ নিতে যায়। হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন না থাকা ও রোগীর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় বাইরে থেকে তা কিনতে পারছিল না। আমরা সাধারণ মানুষের সাহায্যে বিকাশে ও সরাসরি টাকা সংগ্রহ করে ১০টি ইনজেকশনের একটি অ্যান্টিভেনম ডোজের ব্যবস্থা করি। তবে বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হওয়ায় তার আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। চিকিৎসক আরও একটি ডোজের প্রয়োজন হতে পারে এবং আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজনে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। আমরা তখনই কুষ্টিয়া বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা হাসপাতালে খোঁজ নেন এবং সাপুড়ের জন্য আইসিইউ’সহ পরবর্তী চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।’
সাফ্ফাত আরও বলেন, ‘আমরা রোগীকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাইরে থেকে কিনে ১০টি অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করি। পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাত ১১টার দিকে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবরোধী ছাত্র প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ, উচ্ছ্বাস ও তাদের দল সেখানে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’
কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জানান, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে কুষ্টিয়া হাসপাতালের ভর্তির পর আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। চিকিৎসক তাকে অবজারভেশন করছেন।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, সর্বশেষ সরবরাহে থাকা ১৫টি ইনজেকশন রোগীদের দেয়া হয়ে গেছে। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এখন হাসপাতালে কোনো অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই নেই। রোগীর আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। দেরি হলে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা ছিল। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। পাশের জেলা মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ১০টি অ্যান্টিভেনমের একটি ডোজ ছিল।
উল্লেখ্য, ঢাকা সাভারের আব্দুল বারেকের ছেলে সাপুড়ে মনির স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গত শনিবার আলমডাঙ্গায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পেশায় সাপুড়ে হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় সাপ শিকারে বের হয়েছিলেন সাপুড়ে দম্পতি। এসময় একটি বিষধর গোখরো তার বাম হাতে কামড় দেয়।
ওই সাপুড়ের চিকিৎসায় এগিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থী সাফ্ফাতুল ইসলাম, ফাহিম উদ্দিন মভিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রেজাউল বাশার প্রমুখ।