বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক দুই ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেলে নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে এ অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে রাত পৌনে আটটার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অবরোধের কারণে ব্যস্ততম এ মহাসড়কের দুই পাশে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন আটকা পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
অবরোধে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, নগরীর সিঅ্যান্ডবি সড়কে সোমালয় ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাঁদেরই একজন রসায়ন বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্র রাইদুল ইসলাম ওরফে নীরব। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে করে মেস থেকে বাইরে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় মো. রুমি ও রবিউল নামের স্থানীয় দুই যুবকের সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে ওই দুই যুবকের সঙ্গে রাইদুলের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা রাইদুলকে মারধর করেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এ ঘটনার জেরে বেলা একটার দিকে রুমি ও রবিউলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন যুবক সোমালয় ভবনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মেসে ঢুকে আবারও হামলা ও ভাঙচুর চালান। বিষয়টি জানতে পেরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন-চারটি বাস নিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে যান। সোমালয় ভবনের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁদের সঙ্গে ওই এলাকার আশপাশের মেসের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়ক এলাকার সোমালয় ভবন–সংলগ্ন বৈদ্যপাড়া তেমাথা মোড়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ফলে এ মহাসড়কের দুই পাশে কুয়াকাটা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে আসা দূরপাল্লার অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ওই চার জেলা থেকে রাজধানীতে যানবাহনে যাতায়াত করতে হলে নগরের ব্যস্ততম সিঅ্যান্ডবি সড়ক অতিক্রম করতে হয়।
অবরোধ শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা পর বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) ফজলুল হক ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলমও সেখানে এসে আলোচনায় অংশ নেন। ঘণ্টাখানেক আলোচনার পর রাত পৌনে আটটার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দিয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন বলেন, হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।