বায়েজীদ (গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি) :
দুই বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রাজিব মিয়া সাকু (১৭)। এর পর থেকে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে তার। কিন্তু অসহায় দরিদ্র পরিবারের এই সাকুর কপালে জোটেনি সরকারি সুযযোগ-সুবিধা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড।
প্রতিবন্ধী রাজিব মিয়া সাকুর বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের দারিয়াপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত শাহজাহান মিয়া ও বিধবা বেওয়া বেওয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, দুই বছর ধরে যুবক সন্তানকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন অসহায় মা। কোনোমতে নুন-ভাতে কাটে তাঁদের জীবন। ছেলের চিকিৎসার চিন্তা তাদের কাছে বিলাসিতার সমান! তাই বিধবা মাকেই ছেলের খাওয়ানো থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যাবতীয় কাজ করতে হয়। তিনি চোখ বুজলে ছেলের কী হবে? তা ভেবে চোখের পানি ফেলেন মা। এখন পর্যন্ত ওই ছেলেটির কপালে জোটেনি সরকারি সহায়তাসহ প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড।
স্বজনরা জানান, দারিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলো সাকু মিয়া। এরপর পরিবারের দারিদ্রতার কারণে তার লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই মাকে সাহায্য করতে যোগ দেন কাজে। এরপর ১৪-১৫ বছর বয়সে হঠাৎ সে অমানুষিক আচারণ শুরু করে। এরপর তার মা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসকরা জানান তার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রংপুরে কিছুদিন চিকিৎসার পর অর্থের অভাবে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সাকু মিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার মা রমিছা বেওয়া। ফলে তার মানষিক রোগ আরও বেড়ে যায়। বেপরোয়া হয়ে ওসে সে। কাছে যাকে পায় তাকে কামড়ে দেয়। যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ছেলে-মেয়েকে মারধর করে। কোন উপায় না পেয়ে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখেন তার মা।
আরো জানা যায়, রমিছা বেওয়ার বসবাস উপযোগি ঘর-দর্জা কিছুই নেই। অন্যের জায়গায় একটু চালা তুলে কোন মতে দিন কাটছে তার। ঝড় বৃষ্টির সাথে লড়াই করে থাকতে হয় পাগল ছেলেকে নিয়ে। ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নিজের বিধবা ভাতাও পানটি তিনি। ঝিঁয়ের বাড়ির কাজই তার একমাত্র সম্বল।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নাসির উদ্দিন সাহ বলেন, প্রতিবন্ধী রাজিব হোসেন সাকুর সহায়তা দেওয়া ব্যবস্থা করা হবে।