আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জুমার নামাজের পর আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালতের কাছে শাজাহানা খানের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় শাজাহান খানকে।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
শুক্রবার সকালে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ২৬ জুলাই আদাবর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে ব্যাংক এশিয়ার সামনে ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৪ বছরের কিশোর মোতালেব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
পরে মোতালেবের বাবা আব্দুল মতিন ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ৭)। সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগের এ নেতাকে।
এছাড়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শাজাহান খানকে ৪ সেপ্টেম্বর দুদকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।এছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন শাজাহান খান।
এর আগে ২০১৮ এর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত সংঘটিত হয় গণবিক্ষোভ। ঢাকায় ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয় এবং ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এই সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
উল্লেখ্য, সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-২ আসন (রাজৈর-মাদারীপুর সদরের একাংশ) থেকে টানা অষ্টমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাজাহান খান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি।
শাহজাহান খান ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
৩১ জুলাই, ২০০৯ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শাজাহান খান। নভেম্বর, ২০১৩ অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় তাকে নৌপরিবহন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানুয়ারি, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি শুধুমাত্র নৌপরিবহন মন্ত্রীর কার্যভার গ্রহণ করেন।