ফরিদ উদ্দিন, লামা : বান্দরবানের লামায় প্রায় ৪০ জনের সশস্ত্র একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপ দিনে দুপুরে হামলা চালিয়ে ১১টি দোকানে লুট ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারধর করে আহত করে। আহত তিন ব্যবসায়ী হলেন, নেপাল চন্দ্র সেন (৬০), বিশ্বজিত নাথ (৬৭), ও কাজল । মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লামা সদর ইউনিয়নের ছোট বমু, পোয়াং পাড়া ও মেরাখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটায় সন্ত্রাসীরা। পাহাড় কর্তন বন্ধ করা বিষেয় লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর এ জান্নাত রুমি জরুরীভাবে সভার আহ্বান করেন। একইদিনে সভায় পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি ও সাধারণ মানুষের উপর হামলা বিষয়টি উঠে আসে। সভায় লামা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মৌজা হেডম্যান, পাড়া কারবারি ও সাংবাদিকরা অংশগ্রহন করেন।
লুটপাট ও হামলা শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ইউনিয়নের নকশা ঝিরি নামক স্থানে সেনাবাহিনীর সাথে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মাহাবুবুর রহমান পিএসসি বলেন, খবর পেয়ে তিন দিকে থেকে ৩টি সেনাবাহিনী টিমকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি টিমের সাথে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সকাল ১০ টায় সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা ছোট বমুর শুক্কুর পাড়া ও পোয়াং পাড়ায় হামলা চালিয়ে ৫টি দোকানে লুটপাট করে ও কয়েকজনকে মারধর করে। ছোট বমু বাজারের দোকানদার খুইল্ল্যা মিয়া সওদাগর বলেন, এখানে নাছির উদ্দিনের চা দোকান, তাহেরা বেগমের চা ও মুদি দোকান, বিদর্শন বড়–য়ার চা ও মুদি দোকান, কামাল উদ্দিনের চা দোকান ও খুইল্ল্যা মিয়ার মুদি দোকানে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল নিয়ে গেছে। এসময় সন্ত্রাসীরা কয়েকজনকে মারধরও করে। পরে তারা মেরাখোলার দিকে চলে গেছে।
পরে সন্ত্রাসী গ্রুপটি মেরাখোলা বাজারে হামলা চালায়। স্থানীয় লোকজন ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মেরাখোলা বাজারে ৪টি দোকান ভেঙ্গে মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে। ফার্মেসি দোকানদার ডাঃ নেপাল সেন বলেন, মেরাখোলা বাজারের ওমর বশাকের মুদি দোকান, মিলন পালের মুদি দোকান ও কসমেটিক দোকান, কায়েস উদ্দিনের চা দোকান ও আমার নিরাময় ফার্মেসি হতে দেড় লক্ষাধিক নগদ টাকা ও প্রায় লক্ষাধিক টাকার সিগারেট, ঔষুদ নানা রকম মালামাল নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
মেরাখোলা হতে ফিরে যাওয়া পথে সন্ত্রাসীরা নকশা ঝিরি এলাকায় অস্ত্রের মুখে কয়েকজনকে জিম্মি করে আরো ২টি দোকান লুট করে নগদ টাকা ও মালামাল নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জনিয়েছেন। এলাকার লোকজন ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে।
একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, মিয়ারমারের অস্ত্রধারী উগ্র সংগঠন এপি এর কয়েকজন সন্ত্রাসী দেশে ফিরে না গিয়ে এইসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের সাথে স্থানীয় কয়েকজন ম্রো ছেলে, বিভিন্ন সময় জেএসএস থেকে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যুবক ও থানচি এলাকার কয়েকজন মার্মা ছেলে জড়িত রয়েছে। এই গ্রুপটিতে মোট ৬০ থেকে ৭০ জন সদস্য রয়েছে।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, দিনে দুপুরে সন্ত্রাসীদের হামলার বিষয়টি দুঃখজনক। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে আমার এলাকার লোকজন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহার বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। জনসাধারণের নিরাপত্তা দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।