যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়ানো দাবানল তিন দিনেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো বাতাসে তা বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়েছে। ভয়াবহ এই দাবানলে শত শত ঘরবাড়ি ও স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাণ গেছে অন্তত পাঁচজনের। এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, প্রতিবেশী কাউন্টিগুলো থেকেও আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও কর্মীবাহিনী। কিন্তু তাতেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। আগুনে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ পুড়ে গেছে।
হলিউড ও হলিউড হিলস এলাকায় দাবানলে বাধ্যতামূলকভাবে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। টিসিএল চাইনিজ থিয়েটার এবং হলিউড ওয়াক অব ফেমের মতো বিখ্যাত স্থানগুলো এ আগুনের কবলে পড়েছে।
তীব্র বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জাতীয় আবহাওয়া অধিদফতর লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ভেনচুরা কাউন্টিতে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতা জারি করেছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে।
অভিজাত প্যাসিফিক পালিসেডস এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান জানিসে কুইনোনেস বলেন, শহুরে পানি ব্যবস্থার মাধ্যমে দাবানল মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলসের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল বলা হচ্ছে একে। দাবানলে পুড়ে ছাই হয়েছে কয়েক হাজার একর জমি। বাড়ি ছাড়তে হয়েছে পৌনে ২ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে। বাড়ি-ঘর হারিয়ে আর্তনাদ করছেন লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দারা।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরুদ্ধারে আগামী ১৮০ দিনের কর্মযজ্ঞের সব খরচ সরকার বহন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বিনোদন জগতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেসে এ দাবানলের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে ছয়টি আলাদা দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ডগতিতে বয়ে চলা ঝড় আরও বিপদ বাড়িয়েছে। ঝড়ো বাতাসে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বহুমূল্যের ঘর ও গাড়ি। এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারের সম্পদের।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের পৌনে দুই লাখেরও বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।
দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোর মধ্যে আগুনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে অভিজাত এলাকা প্যাসিফিক প্যালিসেইডসে। সেখানে ১৫ হাজার ৮৩২ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। এই এলাকার একটি বাড়িতে ১৯৭৯ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন হলিউডের তারকা অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল। আগুনে সেটিও পুড়ে গেছে। আগুন ছড়িয়েছে হলিউড হিলসেও।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আগুনে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন বিনোদনজগতের আরও অনেকে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। যেমন টেলিভিশনে নিজের বাড়ি আগুনে পুড়তে দেখেছেন অভিনেত্রী প্যারিস হিলটন। ভয়াবহ এই দাবানলকে ‘সানসেট ফায়ার’ নামে ডাকা হচ্ছে।