নিউজ ডেস্ক:
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকই অর্জন করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। মাত্র ৪টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করতে পেরেছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। কৃষি খাতে কোনো ঋণই দেয়নি কয়েকটি ব্যাংক। অন্যব্যাংকগুলো দিলেও তা পরিমানে খুব সামন্য। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ মঙ্গলবার বেসরকারি ও বিদেশ খাতের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকে পিছিয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুশিয়ার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্সে হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিহ হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সর্বমোট ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার রয়েছে ব্যাংকগুলোর। নভেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। সেখানে ব্যাংকগুলো মাত্র ৪ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বৈঠকে জানানো হয়, ব্যাংক আল ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান কৃষি খাতে কোনো ঋণ দেয়নি। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), ফার্মাস ব্যাংক, মধুমিত, এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি গ্লোবাল ও ইউনিয়ন ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অতিসামন্য। এই ব্যাংকগুলো তাদের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও বিতরণ করেনি।
সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক (৩৪ শতাংশ), বেসিক (৫১ শতাংশ), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (৪১ শতাংশ), জনতা ব্যাংক (৫৩ শতাংশ), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (২৮ শতাংশ), রুপালী ব্যাংক (৩১ শতাংশ) ও সোনালী ব্যাংক নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১ শতাংশ অর্জন করেছে।
বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক (২৩ শতাংশ), আল আরাফাহ (৪০ শতাংশ), বাংলাদেশ কমার্স (৭৩ শতাংশ), ব্যাংক এশিয়া (৩৩ শতাংশ), ব্র্যাক (৭৪ শতাংশ), ডাচবাংলা (৭৭ শতাংশ), ঢাকা (৩০ শতাংশ), ইস্টার্ন ( ৪৪ শতাংশ), এক্সিম (২৪ শতাংশ), ফার্স্ট সিকিউরিটি (২৯ শতাংশ), আইএফআইসি (৮৩ শতাংশ), ইসলামী (৫৪ শতাংশ), যমুনা (৫০ শতাংশ), মেঘনা (১৯ শতাংশ), মার্কেন্টাইল (৭০ শতাংশ), মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট (১৮ শতাংশ), ন্যাশনাল (৩৭ শতাংশ), এনসিসি (৫০ শতাংশ), এনআরবি (৮০ শতাংশ), ওয়ান ব্যাংক (৫০ শতাংশ), প্রাইম ( ৪৩ শতাংশ), পূবালী (৩৪ শতাংশ), সোসাল ইসলামী (২২ শতাংশ), সাউথ বাংলা (২৩ শতাংশ), সাউথইস্ট ( ২১ শতাংশ), স্ট্যান্ডার্ড (৬৩ শতাংশ), দি সিটি (৮৬ শতাংশ), ট্রাস্ট (৬৩ শতাংশ), ইউসিবি (৩০ শতাংশ) ও উত্তরা ব্যাংক নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক এনএ ( ৮২ শতাংশ), এইচএসবিসি (২২ শতাংশ) ও উরি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
তবে প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিডল্যান্ড, শাহজালাল ইসলামী, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।
বৈঠকে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ও ব্যাংকগুলোর অর্জন সম্পর্কে অবহিত করা হয়। বছর শেষে যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুসারে, বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে অনার্জিত অংশের পুরোটাই বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলক জমা রাখা হবে। আর এ অর্থের উপর কোনো সুদও দেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।